যে ৫ টি বিদেশি গোয়েন্দাসংস্থা বাংলাদেশের মাটিতে সর্বাধিক সক্রিয়..রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইং(র) এর আদ্যপান্ত পর্ব || অনিক আহসান
প্রথম পর্ব
রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইং এর আদ্যপান্ত :
বাংলাদেশে এ ৫ টি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা সর্বাধিক সক্রিয় আছে বলে বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইং কে প্রধানতম ধরা হয়ে থাকে। এই সংস্থা বাংলাদেশের অনেক ইতিহাস ঘটনঘটনের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত। (সতর্কীকরনঃ এখানে আমি এমন কিছু তথ্য দিয়েছি যা হয়তো মতাদর্শগত বা অন্যকোন কারনে কারো কারো ভালো নাও লাগতে পারে সেক্ষেত্রে তার ভিতরে আর না ঢুকাই ভালো)
পুর্ব কথাঃ
১৯৬২ সালের ইন্দো চীন সীমান্ত সংঘাতে ব্যার্থতার পরে বৃটিশদের সময় থেকে বৈদেশিক গোয়েন্দা ততপরতা পরিচালনার দায়িত্ব পালন কারী আইবি র পরিবর্তে জহর লাল নেহেরু ভারতে জন্য একটি ভিন্নধর্মী ও সু-সঙ্গঠিত পেশাদার বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা সৃস্টির প্রয়োজনিয়তা অনুভব তারই ধারাবাহিকতায় ইন্দীরা গান্ধী ক্ষমতায় আসার পরে ১৯৬৮ সালে ২১ সেপ্টেম্বর প্রাক্তন বৃটিশ ইন্টেলিজেন্স অফিসার ও আইবি র ডেপুটি ডাইরেক্টর আর এন কাও এর নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় তৈরি করা হয় ভারতের প্রধান বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইং সংক্ষেপে “র” । র এর প্রধান কে একজন ক্যাবিটে সেক্রেটারি পদমর্যাদা সম্পন্ন সচিব হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়।
নয়া দিল্লির লোদী রোডের সদর দফতর
থিমঃ রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইং এর থিম ২৪০০ বছর পুর্বের মৌর্য সম্রাজ্যের বিখ্যাত স্ট্রাটেজিস্ট বিষ্ণগুপ্ত চানক্যের প্রনীত রাস্ট্র ও বৈদেশিক নীতির উপর গড়ে উঠেছে। “র” এর প্রতিটি পরিকল্পনা প্রনয়ন ও অপারেশনাল অ্যাক্টিভিটি চানক্য প্রদর্শিত নীতিসমুহের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়ে থাকে।সাম,দান,ভেদ,দন্ড চানক্যের অর্থশাস্ত্রের এই চারটি পন্থা ভারত তথা “র” এর বিদেশনীতির ভিত্তি।
শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী “র” এর কার্যক্রমের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময়ে উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তার অন্যতম মেন্টর লুইস এফ হালির একটি উধতি কোট করে বলেন “’Ability to get what one wants by whatever means: eloquence, reasoned arguments, bluff, tirade, threat or coercion, as well as, by arousing pity, annoying others, or making them uneasy”
বর্তমান প্রধান সঞ্জিব ত্রিপাঠি
লক্ষ ও উদ্দেশ্য
পার্শবর্তী দেশসমুহ যাদের সাথে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা সরাসরি জরিত তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে ঐ সব দেশের বৈদেশিক নীতি নির্ধারনে ভুমিকা রাখা।
প্রবাসে অবস্থানকারী ভারতীয় বা ভারতীয় বংশভুত জনগোস্টীকে ব্যাবহার করে আন্তর্জাতিক সমর্থন সহানুভুতি নিজের পক্ষে নিয়া আসা।
পশ্চিম ইউরোপ ও যুক্তরাস্ট্র থেকে পাওয়া পার্শবর্তি দেশগুলি বিশেষত পাকিস্তানের সমরাস্ত্র সাপ্লাই পর্যবেক্ষনে রাখা ও সীমিত করা চেস্টা।
সংগঠনঃ
রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইং এর সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে যতদুর জানা যায় তা মার্কিন সি আই এ ধাঁচে গঠিত। একজন ক্যাবিনেট সেক্রেটারির(রিসার্চ)পদর্যাদা সম্পন্ন প্রধানের অধীনে বিভিন্ন ডেস্ক ও অপারেশনাল গ্রুপে বিভক্ত।বিভিন্ন ডেস্কের অধীনস্তরা বেশির ভাগ চীন ও পাকিস্তান সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ।“র”প্রধান প্রাশনিক ভাবে মন্ত্রী পরিষদ সচিবের কাছে রিপোর্ট করেন এবং মন্ত্রী পরিষদ সচিব প্রধানমন্ত্রীকে রিপর্ট করে থাকে। তবে ক্ষেত্র বিশেষে “র” সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও রিপোর্ট করে থাকে। এছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা উপদেস্টার কাছেও রুটিন মাফিক প্রতিদিন “র” প্রধান রিপোর্ট দেন।
“র” এর সংঠন ভৌগলিক এলাকা ও অপারেশনাল কার্যক্রমের ভিত্তিতে বিভক্ত।
দুইজন বিশেষ সচিবের ও একজন ডাইরেক্টর পদমর্যাদার এ্যাভিয়েশন রিসার্চ সেন্টারের জন্য
চারজন অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা বিভিন্ন ভৌগলিক এলাকার জন্য
এছাড়া ৪০টি ডেস্কে বিভক্ত কার্যক্রমের জন্য কমপক্ষে ৪০জন জয়েন্ট সেক্রেটারী পদমর্যাদা কর্মকর্তা বর্ত্মানে কর্মরত।
নয়াদিল্লীর লোদি রোডের সদর দফতর –আঞ্চলিক সদর দফতর-বিদেশে অবস্থিত স্টেষন অফিস-মাঠকর্মী। বিদ্দেশে অবস্থিত স্টেষন অফিস গুলি একএকজন কন্ট্রোলিং আফিসারের অধীনে যারা মাঠ পর্যায়ে অবস্থানকারী কর্মীদের অ্যাসাইন্ট প্রদান,নিয়ন্ত্রন,সুপারভিশন তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষন করে থাকে। বিভিন্ন সুত্র থেকে ফিল্ড অফিসার ও সহকারী ফিল্ড অফিসাররা তথ্য সংগ্রহ করে সিনিয়ার ফিল্ড অফিসারকে দেয় সিনিয়ার ফিল্ড অফিসার বা স্টেশন অফিসার সেই প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাছাই করে আঞ্চলিক বা সদর দফতরের বিভিন্ন ডেস্কে প্রেরন করেন।এরপর ডেস্ক প্রধান সেই তথ্য গুরত্ব বিচারে আরো উপরে প্রেরন করেন। “র” এ কর্মীদের কে এজেন্ট হিসাবে না বলে রিসার্চ অফিসার বলা হয়। এই গোয়েন্দা সংস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিমানে নারী অফিসার কাজ করে থাকে। বগত বছরে চীন ও পাকিস্তান ডেস্ক ভেঙ্গে আলাদা ভাবে চীনের জন্য একটি ডেস্ক করা হয়েছে।
এস এফ এফঃ এস্টাবলিশমেন্ট ২২ “র” পরিচালিত বিশেষ বাহিনী।যারা ক্ল্যান্ডেস্টাইন অপারেশন পরিচালনা করে থাকে।
রিক্রুটমেন্টঃ
স্বাধীন সংস্থা হিসাবে “র” এর কর্মকর্তা বা মাঠ পর্যায়ে কর্মী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সাধারনত ধরাবাঁধা কোন নিয়ম নেই। সাধারনত ভারতীয় সেনা,নৌ,বিমান বাহিনীর স্পেশালফোর্স,পুলিশ বাহিনী, আই এ এস ক্যাডার,আই বি,সিবিআই অথবা মেধা বিচারে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজ্যুয়েট ও শিক্ষা প্রতিস্টান থেকেও নেয়া হয়ে থাকে। “র” এ কর্মরত চাকরিকে অ্যানালাইসিস ক্যাডার সার্ভিস বা আরএএস বলা হয়।
আই এ এস (বাংলাদেশি মান্দন্ডে বি সি এস) অফিসারদের মধ্য থেকে যারা “র” তে যেতে ইচ্ছুক তাদের ক্যাবিনেট সেক্রেটারিয়েট এর অধীনে ডেপুটি ফিল্ড অফিসার DFO পদের পরীক্ষায় বসতে হয়.পরীক্ষায় উত্তির্নদের মধ্য থেকে মেধার ভিত্তিতে সেরাদের বেছে নেয়া হয় এরা সবাই রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস ক্যাডার নামে পরিচিত হয়। কমপক্ষে ৮ বছর DFO থাকার পরে তাকে পরবর্তি লেভেলে ফিল্ড অফিসার FO পদে পদায়ন করা হয়। কমপক্ষে ৫ বছর FO থাকার পর তাকে সিনিয়ার ফিল্ড অফিসার SFO (ক্লাশ ওয়ান) হিসাবে প্রমোশল করা হয়। এরপরের ধাপে স্টেষন প্রধান বা রেসিডেন্স অফিসার RO হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়।এরপর তাকে কোন ডেস্ক প্রধান হিসাবে “র” আঞ্চলিক দফতর,সদর দফতর এ রাখা হয় অথবা নিজ নিজ বাহিনী বা ভারতের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের যেকোন স্থানে পাঠানো হয়।
DFO FO SFO রা সরাসরি বিদেশের মাটিতে কর্মরত থাকে।তারা তাদের স্টেশন অফিসারের ভাগ করে দেয়া দায়িত্ব অনুযায়ি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে এবং ইনফর্মার হিসাবে স্থানীয় গুরুত্বপুর্ন ও প্রয়োজনিয় ব্যক্তিদের,ঐ দেশের গোয়েন্দা সংস্থা বা ঐ দেশে অবস্থানকারি তৃতীয় কোন দেশের গুপ্তচর কর্মীকে নিজের পক্ষে আনার চেস্টা করে।
বিদেশের মাটিতে টার্গেট নির্বাচন পদ্ধতিঃ
বিদেশে এজেন্ট অথবা ইনফর্মার রিক্রুট করবার ক্ষেত্রে সাধারনত ডবল এজেন্টদের প্রাধান্য দেয়া হয়।বিদেশের মাটিতে রিক্রুটমেন্টের জন্য চানক্যের অর্থশাস্ত্রর নির্দেশনা অনুযায়ি টার্গেট সিলেকশন করে তাকে রিক্রুট করার জন্য যে সব দুর্বলাতাকে কাজে লাগানো হয় তা হলো যৌনক্ষুধার প্রতি দুর্বলতা, অর্থর প্রতি দুর্বলতা, প্রতিশোধপরায়নতা,ক্ষমতার লোভ। এছাড়া
শাষকগোস্টির প্রতি অসন্তুস্ট নির্যাতিত ও নির্বাসিত এমন কাউকে।
ক্ষতিপুরন হতে বঞ্চিত ব্যাক্তি।
ন্যায়পরানয়তার কারনে প্রতিস্টান কর্তৃক বঞ্চিত ব্যক্তি।
জোরপুর্বক নিগ্রহের স্বীকার হওয়া নারী।
উচ্চাকাংখি সুন্দরী তরুনী।
সরকার কর্তৃক সম্পত্তি বা অর্থ বাজেয়াপ্ত হয়েছে এমন ব্যক্তি।
উপরের দুর্বলাতার কারনে ব্ল্যাকমেইলের স্বীকার হওয়া লোক।
সংখ্যালঘু জনগোস্টি।
প্রশিক্ষনঃ
রিক্রুট হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পড় নির্বাচিত ব্যাক্তিকে প্রয়োজন ভেদে সল্পমেয়াদি বেসিক ও দীর্ঘ মেয়াদি কালেক্টিভ ট্রেনিং প্রদান করা হয়। সল্প মেয়াদে ১০ দিনের ট্রেনিং এ প্রধানত রিক্রুটের মনবল বৃদ্ধির ব্যাবস্থা করা হয় পাশাপাশি বহির্দুনিয়া আর গোয়েন্দা জগতের পার্থক্য ব্যাখ্যা,প্রতিপক্ষের গোয়েন্দা চেনার উপায়,গোয়েন্দা জগতে শ্ত্রু বা বন্ধু নেই সবাই প্রতিদন্দ্বি,সাধারন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যাবহার যেমন রেডিও ট্রান্সমিটার ব্যাবহার ইত্যাদি।এই ট্রেনিং সাধারনত হরিয়ানার গুরুগাও এ ট্রেনিং স্কুলে প্রদান করা হয়। এছাড়া প্রশিক্ষিত অফিসারদের মুম্বাইয়ে ফিনান্সীয়াল ইন্টেলিজেন্স স্কুলে প্রশিক্ষন দেয়া হয়।
প্রাথামিক ট্রেনিং শেষ প্রয়োজনমাফিক দেরাদুনে ১-২ বছরের ফিল্ড ট্রেনিং প্রদান করা হয়।ফিল্ড ট্রেনিং এ আন্ডার কাভার অপারেশন,কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স,স্যাবোটেজ,জনমত ম্যানিপুলেট ও দন্দ্ব সৃস্টির কৌশল সহ অনেক বিষয়ে ব্যাপক ট্রেনিং প্রদান করা হয়। ট্রেনিং সেন্টারে সবাই নিজ নিজ নাম পরিচয়ের বদলে কোড ব্যবহার করে থাকে।
সরাসরি নিয়োগকৃত DFO দের সাধারনত বেসিক ও অ্যাডভান্স দুই ধরনের ট্রেনিং সম্পন্ন করার পর বিদেশে ডেপুটি ফিল্ড অফিসার হিসাবে পাঠানো হয়।।সংস্লিস্ট দেশের স্থানীয় রিক্রুটদের মেধা,গুতুত্ব ও কাজের ধরন বুঝে শুধু বেসিক অথবা অ্যাডভান্স ট্রেনিং উভয়ই দেয়া হয়।
কর্ম পদ্ধতিঃ
“যা বল প্রয়োগে অর্জন সম্ভব নয় তা ধোঁকা দিয়ে সিদ্ধ করা যায়,বিষাক্ত গোখারা সাপও কাক আর সোনার হারের ফাঁদে পরাজিত হয়।“ –চানক্য
তথ্য সংগ্রহ: কভার্ট ও নন কভার্ট উভয় পদ্ধতি ব্যবহার করে “র” তথ্যা সংগ্রহ করে থাকে।
আক্রমনাত্তক গোয়েন্দাবৃত্তি: “র” এলাকা ভেদে আক্রমনাত্তক গোয়েন্দা কৌশল পরিচালনা করে। এরমধ্যে গুপ্তচরবৃত্তি,মানসিক যুদ্ধ পরিচালন,অন্তর্ঘাতমুলক কর্ম কান্ড।
ক্ল্যান্ডেস্টাইন অপারেশনঃ সাম্রিক বাহিনীর স্পেশাল ফোর্স থেকে নেয়া বিশেষ প্রশিক্ষনপ্রাপ্তদের সহায়তায় গুপ্তহত্যা পরিচালনা করা হয়।
প্রতিগোয়েন্দাবৃত্তি: “র” দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে প্রতিবেশি রাস্ট্রগুলিতে প্রতিদন্দ্বি গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স পরিচালনা করে।
মেইল হ্যাকিং ও ইন্টার্সেপ্সহনঃ “র” আই টি এক্সপার্টরা নিয়নিত স্থানীয় গুতুত্বপুর্ন দফতর ও ব্যক্তির ইমেইল হ্যাক করে থাকে এবং পোস্টাল মেইল ইন্টার্সেপ্ট করে থাকে।
গুরুত্বপুর্ন স্থাপনার কাছাকাছি ট্রান্সমিটার স্থাপনঃ সংশ্লিস্ট দেশের গুরুত্বপুর্ন স্থাপনা যেমন বিভিন্ন বাহিনী সদর দফতর,সরকারী গুরুত্বপুর্ন অফিস ও অত্যন্ত স্পর্ষ্কাতর ব্যক্তিবর্গর বাড়িতে টেলিফোনে আড়ি পাতে ও আশেপাশে স্থায়ী বা ভ্রাম্যমান হাই ফ্রিকোয়েন্সী ট্রান্সমিটার সহ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহ করে।
জনমত ঘুরানোঃ “র” বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে সংশ্লিস্ট দেশের জনমত তার পছন্দ ও সুবিধা অনুযায়ি ঘুরাতে চেস্টা করে এজন্য RO নির্দেশনা অনুযায়ি ঐ দেশে অবশানকারি DFO এবং FO রা তাদের স্থানীয় নেটওয়ার্ক, লোকাল ইনফর্মার ও রিক্রুটদের ব্যবহার করে প্রকাশিত তথ্য ম্যানিপুলেট করার চেস্টা করে।
পর্যবেক্ষন,ম্যাসেজ ইন্টারসেপশন, সিগন্যাল ও পোস্টাল চ্যানেল ব্যাবহার,পর্যবেক্ষন,ফোন ট্যাপিং,ই মেইল হ্যাক,কোড উদ্ধারের মত আধুনিক গোয়েন্দা কৌশল ব্যাবহার করে তথ্যা সংগ্রহ করা হয়।একই তথ্য একাধিক উতস হলে সংগ্রহ করে ক্রস চেক করে দেখা হয়। এম্ন কি ব্ল্যাকবেরি কোম্পানীর পরিসেবা ও নেটওয়ার্ক “র” পর্যবেক্ষন ও নিয়ন্ত্রনের চেস্টা করে।
প্রধানঃ সঞ্জিব ত্রিপাঠি
গুরুত্বপুর্ন ব্যক্তিঃ এবি মাথুর এবং আনন্দ অর্ণি ।
এপর্যন্ত পরিচালিত গুরুত্বপুর্ন অপারেশনঃ
হিমালয়ে ELINT অপারেশন যা ১৯৬৪ সালে চীনের পারমানবিক পরীক্ষা চালানোর পর সি আই এ ও “র” ১৯৬৮ সালে যৌথভাবে চীনের মিসাইল স্টেষন ও ঐ বিস্ফোরনের স্থান নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিখ্যাত ভারপ্ত্যীয় পর্বতারোহী নন্দা দেবীর সহায়তায় পরিচালনা করে।
১৯৭০ এ কাশ্মীরী বিচ্ছিন্নতাবাদি দের ব্যবহার করে ভারতের বিমান ছিনতাই করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া যার ফলশ্রুতিতে ভারত তার আকাশসীমার উপর দিয়ে পাকিস্তানে দুই পাশের বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করে দিতে পারে।
১৯৭১ এ বাংলাদেশ অপারেশনঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয় অংশ গ্রহন।
অপারেশন স্মাইলিং বুদ্ধাঃ “র” এর দেয়া ১৯৭৪ সালে ভারতের পারমানবিক অস্ত্র প্রোগ্রাম এর কোড নেম।১৯৭৪ এর ১৮ মে পারমানবিক অস্ত্র তৈরী ও পরীক্ষার আগে পর্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা।
সিকিম দখলঃ ১৯৭৫ এ “র” এর সহোযোগীতায় ভারতীয় বাহিনী সিকিম একিভুত করে।
কাহুটা ব্লু প্রিন্ট ফাঁসঃ১৯৭৮ সালে পাকিস্তানের রাওয়াল পিন্ডিতে কাহুটা এলাকায় খান রিসার্চ ল্যাবটারিতে পাকিস্তানের পারমানবিক কর্মসুচির খবর উদ্ধার করে “র”। ল্যাবটারির কাছে তাদের পরিচালিত একটি নাপিতের দোকান থেকে সংগ্রহ করা চুলের স্যাম্পল এ বেডিয়েশন পরীক্ষা করে। এরপর তারা ক্ল্যান্ডেস্টাইন অপারেশন পরিচালনা করে প্রকল্প ধংস করতে চাইলে ভারতের ততকালীন প্রধান মন্ত্রী মোরাজি দেশাই তাদের নিবৃত্ত করেন এবং পাক প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক কে ফোন করে “র” এর পরিকল্পনার কথা জানিয়ে দেন।
জিয়াউর রহমান হত্যা ও জেনারেল এরশাদের ক্কখমতা দখলে সহায়তাঃ মোরাজি দেশাইয়ের চাপে আশির দশকের পুর্বে “র” জিয়া উতখাতে অপারেশন পরিচালনা করতে না পারলেও ১৯৮১ সালে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হত্যাকান্ড দিক নির্দেশনা দেয় এবং পরবর্তিতে জেনারেল এরশাদ কে ক্ষমতায় বস্তে সহায়তা করে।
অপারেশন মেঘদুতঃ ১৯৮২ তে ভারতের সেনা বাহিনীর যে ধরনের স্নো ওয়ার্ফেয়ারের গীয়ার ব্যবহার করে একই ধরনের আর্টিক ওয়ার্ফেয়ারের গীয়ার পাকিস্তান লন্ডনের একটি কোম্পানী থেকে সংগ্রহ করছে জানতে পারে “র”।যার ফলে ভারতীয় সেনা বাহিনী পাকিস্তানি দের পুর্বেই সিয়াচেল হিমবাহের সিংভাগ দখল করে নেয়।
মধ্য আশির দশক জুড়ে পাকিস্তানের অবস্থিত খালিস্তানি (শিখ) বিদ্রোহীদের ঘাটিতে ক্ল্যান্ডেস্টাইন অপারেশন পরিচালনা করে।
মালদ্বীপ অভিযানঃ ২০০ তামিল গেরিলার হাতে দখল হয়ে যাওয়া মালদ্বীপ কে সহায়তায় “র’ ও ভারতীয় বিমান বাহিনী একসাথে অভিযান পরিচালনা করে।
শ্রীলংকায় তামিল ট্রেনিংঃ আশির দশক ধরে “র” শ্রী লংকায় তামিলদের স্বাধীন রাস্ট্রের জন্য উদ্বুদ্ধকরন ট্রেনিং পরিচালনা সহ পরবর্তিতে ভারতীয় বাহিনীর অভিযানে সহায়তা করে।
অপারেশন চানক্যঃ পুরো ৯০ এর দশক ধরে কাশ্মীর উপত্যাকায় আই এস আই ও তাদের ট্রেনিং প্রাপ্ত গেরিলাদের ধরতে এ অভিযান চালানো হয়।
এছাড়া আফগান গৃহযুদ্ধে ৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে নর্দান অ্যালায়েন্স কে র” সহায়তা করে। মার্কিন যুক্ত রাস্ট্র পরিচালিত ওয়ার অন টেরর এ সক্রিয়ভাবে সি আই এ মোসাদ সহ অন্যান্য পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থার সাথে অংশগ্রহন।
২০১১ সালে পাকিস্তানের মেহেরান নৌ ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে তিনটি অত্যাধুনি আর্লি ওয়ার্নিং রাডারযুক্ত পাকিস্তানের একমাত্র আর্লি ওয়ার্নিং বিমান স্কোয়াড্রন ধংস করা।
পাকিস্তানের বালুচিস্তানে বিদ্রোহীদের প্রশিক্ষন ও অস্ত্র প্রদান।পাকিস্তানের করাচী ভিত্তিক রাজৈতিক হত্যাকান্ড পরিচালনা।নেপালের রাজা বিরেন্দ্র বীর বিক্রম কে নির্বংশ করা।৯০ এর দশকে নেয়া এক পরিকল্পনার অংশ হিসাবে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলিতে গত দেড় দশক ধরে ৫,০০০ ভারতীয় তরুনীদের বিয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্রী হিসাবে তৈরী করে প্রেরন করা হয়েছে।
ব্যার্থতাঃ
বাংলাদেশ কে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট এর হত্যাকান্ডে বাধা প্রদানে ব্যার্থতা অথবা ইচ্ছাকৃত নির্লিপ্ততা গ্রহন।
রাজীব গান্ধীর হত্যাকান্ড রুখতে ব্যার্থতা।
কার্গিল যুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মুভমেন্ট ধরতে ব্যার্থতা।
মুম্বাই হামলার আগাম তথ্য প্রদানে ব্যার্থতা।
আফগানিস্তানে আহামেদ শাহ মাসুদের হত্যা পরিকল্পনা সম্পর্কে তথ্যা সগ্রহে ব্যার্থতা।
২০০৭ সালে “র” মানিক চন্দ্র ছদ্যনাম ব্যবহারকারী বাংলাদেশের ডিজি এফ আই এর একজন গুপ্তচরের
অস্ত্বীত্তের কথা জানতে সক্ষম হয়। ঐ লোক ১৯৯৯ থেকে দীর্ঘ দিন পুর্ব দিল্লিতে অবস্থান করে গুতুত্বপুর্ন তথ্য সংগ্রহ করতো।
বড় ধরনের ডিফেকশনঃ ২০০৪ সালে “র” এর একজন জয়েন্ট সেক্রেটারি পদমর্যাদার কর্মকর্তা ও দক্ষিন পুর্ব এশিয়া ডেস্কের প্রধান রাবিন্দার সিং দলত্যাগ করে অনেক গুরুত্বপুর্ন ডকুমেন্ট সহ মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে আশ্রয় নেয়।
বাংলাদেশে এ “র” এর অপারেশন ও কার্যক্রমঃ
বাংলাদেশে কমপক্ষে ৩ লক্ষ ‘র” কর্মী ও ইনফর্মার সক্রিয় আছে বলে জানা এর মধ্যে ভারতীয় ৪,০০০ এর মত (স্পেকুলেশন) আর বাকিরা ইনফর্মার ,ধর্মীয় ও মতাদর্শগতভাবে ‘র” এর প্রতি চরম সহানুভুতিশীল যাদের যেকোন কাজে লাগানো সম্ভব। (কারেকশন ১০.০৯)
বাংলাদেশে যে সব বড় ঘটনার সাথে রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইং এর সংশ্লিস্টতা নিয়ে আঙ্গুল তোলা হয়ঃ
বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি বাহিনী গঠন ও পরিচালনায় “র” জরিত আছে বলে ধারনা করা হয়।
১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান হত্যা পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে র” এর সংশ্লিস্টতা ছিলো বলে ধরা হয়।
এরশাদের ক্ষমতায় আরোহন এ সহযোগীতা ও তাকে ডবল এজেন্ট সন্দেহে এরশাদের পতনে সহায়তা।
১৯৯৬ এর জেনারেল নাসিমের ব্যার্থ অভ্যুত্থান প্রচেস্টা।
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এম এস কিবরিয়া হত্যাকান্ড।
১/১১।
বিডিয়ার বিদ্রোহ।
এছাড়া বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিরতা তৈরীর জন্য রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইং কে দায়ি করা হয়।
বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল,এন জিও,সরকারী প্রতিস্টান,বানিজ্য অ্যাসোসিয়েশন থেকে শুরু করে প্রতিটি সরকারী বেসরকারি গুরুত্বপুর্ন প্রতিস্টানের মধ্যে রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইং এর কর্মীরা সক্রিয় আছেন। বাঙ্গালদেশের তাদের প্রধানতম রিক্রুটিং মাধ্যম হচ্ছে “ইন্ডিয়ান কালচারাল সেন্টার”। ঢাকা শহরের অন্তত দুইটি মসজিদ এর ইমাম অথবা সহকারি হিসাবে “র”
কর্মকর্তা কাজ করছেন। চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, গোপালগঞ্জ ও সিলেটের একাধিক মাদ্রাসার শিক্ষক কভারে “র” অফিসার কর্মরত আছেন।বাংলাদেশের প্রতিটা গ্যারিসন শহরের প্রবেশ মুখে এবং আশেপাশে একাধিক “র” সার্ভেইলেন্স পোস্ট এ “র” অফিসাররা কর্মরত আছেন।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি (আমার জানা মতে) যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখামুখি হওয়া জামাতের একজন নেতা(এখনো চার্জ গঠন করা হয় নি) “র” এর পুরানো সক্রিয় কর্মী।
পরেও পর্বঃ আই এস আই বা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (পাকিস্তান)
তথ্যসুত্রঃ
১।ইন্ডিয়াস এক্সটার্নাল ইনটেলিজেন্স ,সিক্রেটস অফ ড়িসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইং
-মেজর জেনারেল(অব ভি কে সিং )
২।দি কাওবয়েজ অব ‘র”- বি.রমন
৩।“এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্যঃ স্বাধীনতার প্রথম দশক”
-মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী বীর বিক্রম
৪।ইন সাইড “র” – অশোক রায়না।
৫।জিয়া হত্যা ও কিচু কথা-লেখকের নাম মনে নাই
৬।”র” এর ভায়াবহ থাবা”-সালাউদ্দিন শোয়েব চৌধুরি ।
৭।ইন্টার্নেট ও নিজেস্ব সুত্র।
.........................................-------------------------------------------------------------.............................
বাংলাদেশে এ যে ৫ টি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা সর্বাধিক সক্রিয় আছে বলে বিবেচনা করা হয় তার মধ্যে পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স সংক্ষেপে আই এস আই কে তর্ক সাপেক্ষে সবচেয়ে সক্রিয় গোয়েন্দা সংস্থা ধর আহয়ে থাকে। এই সংস্থা বাংলাদেশের অনেক ইতিহাস বিখ্যাত কুখ্যাত ব্যক্তি ও ঘটনঅঘটনের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত।
পুর্ব কথাঃ
“সরকারের ভিতরে সরকার” পাকিস্তানের মাটিতে এই নামে বহুল পরিচিত ও সবচেয়ে ক্ষমতাধর সংস্থাটির নাম আই এস আই। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা পরবর্তি পাকিস্তানে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তৈরী হয়েছিলো দুইটি গোয়েন্দা সংস্থা আইবি ও এমআই। কিন্তু ১৯৪৭ সালে পাক ভারত সংঘর্ষের পর সামরিক বাহিনীর প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্যগুলির মধ্যে সমন্নয় সাধনে ঘাটতি থাকায় এ জন্য একটি নতুন সংস্থা গঠন জরুরি হয়ে পড়লে। ১৯৪৮ এর মাঝামাঝি ঐ সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত অস্ট্রেলিয় বংশভুত ব্রিটিশ আর্মি অফিসার ও পাকিস্তান সেনা বাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্ট্যাফ মেজর জেনারেল রবার্ট চাওথামের পরামর্শে ও তত্বাবধানে আই এস আই তৈরী হয়। প্রাথামিক ভাবে এর কাজ তিন বাহিনীর প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাছাই করে সমন্নয় সাধন করা হলেও ১৯৫০ সাল থেকে একে আদালা করে শুধুমাত্র পাকিস্তান রাস্ট্রের নিরাপত্তা,স্বার্থ রক্ষা ও অখন্ডতা বজাইয় রাখার দায়িত্ব দেয়া হয়।প্রথম সংস্থা প্রধান কর্নেল সৈয়দ শহিদ হামিদ।
মুল মন্ত্রঃ বিশ্বাস একতা শৃংখলা।
লোগোঃ
সদর দফতরঃ ইসলামাবাদ সাহরা ই সোহরোয়ার্দি ।খুব অনারম্বর বাহ্যিক নিরাপত্তা বজায় রেখে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের সামনে দিয়ে প্রবেশ করতে হয়।
বর্তমান প্রধানঃ লেঃজেঃ আহামেদ সুজা পাশা।
সদস্য সংখ্যাঃ সম্ভাব্য ২৫,০০০ ও অসংখ্য ইনফর্মার।
লক্ষ ও উদ্দেশ্যঃ
পাকিস্তান রাস্ট্রিয় স্বার্থ ও অখন্ডতা রক্ষা করা।
যে সকল ব্যক্তি,গোস্টি,প্রতিস্টান,বৈদেশিক গোয়েন্দাসংস্থা রাস্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে তাদের উপর নজরদারি করা ও প্র্যোজনে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স পরিচালনা করা।
আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করতে সক্রিয় কার্যক্রম পরিচালনা।
বিদেশে গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করা।
ইসলাম ধর্ম সমুন্নত রাখা ও নিজেদের কার্য সিদ্ধির উদ্দেশ্যে ব্যাবহার করা।
ভারতের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধে কৌশলগত ভাবে নিজেদের অগ্রবর্তী রাখার উদ্দেশ্যে পার্শবর্তি সব দেশকে প্রভাবিত করা।
সরকার ও সেনা বাহিনীকে বাইরে ও ভিতর থেকে নিয়ন্ত্রন করা।
সরকারের বৈদেশিক নীতি নির্ধারন করা।
পাকিস্তানের সমাজে অবিশ্বাস ও অনৈক্য জিইয়ে রেখে নিজেদের সকল কর্মকান্ডর বৈধতা দেয়া।
ইসলামাবাদে আই এস আই রেসিডেন্স
সাধারন দায়িত্বঃ
নিজেদের অফিসারের,মিডিয়া কার্যকলাপ পর্যবেক্ষন করা।
পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গোস্টির উদ্দেশ্য ও গতিবিধি নজর রাখা।
দেশে ও দেশের বাইরে কুটনীতিকদের ওপর নরদারী করা।
বিভিন্ন কমিউনিকেশন ইন্টারসেপ্ট ও মিটরিং করা।
প্রাপ্ত তথয উপাত্ত পর্যালোচনা করা।
সঙ্গঠনঃ ৩ জন ডেপুটি ডাইরেক্টর জেনারেল এর অধীনে ৩ টি কোর বিষয়ের জন্য ৭টি বিভাগ কাজ করে।
ডিডিজি ইন্টার্নাল,ডিডিজি এক্সটার্নাল ও ডিডিজি জেনারেল।
এরমধ্যে ইন্টার্নাল উইং এর ডিডিজি -পলেটিক্যাল ইস্যু ও কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স,
এক্সটার্নাল উইং এর ডিডিজি -বৈদেশিক ইস্যু ও বিশ্লেষন।
ফরেন রিলেশন উইং এর ডিডিজি – পাকিস্তানের বাইরে বৈদেশিক যোগাযোগ রক্ষা ও দেখাশোনা করে।
ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স এর সব কাজ মুলত ৭ টি ডাইরেক্টরেটে দ্বারা পরিচালিত হয়।
১.জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স এক্স (JIX)
এর কাজ মুলত সেক্রেট্রিয়েট হিসাবে দায়িত্ব পালন করা।এই ডাইরেক্টরেট আই এস আই এর অন্যান্য উইং ,আঞ্চলিক সংগঠন ও মাঠ পর্যায়ে অবস্থিত ফিল্ড অফিসগুলির সাথে সমন্নয় সাধন করে এবং এদের প্রাশনিক সাপোর্ট প্রদান করে।এছাড়া প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনার ভিত্তিতে সম্ভাব্য হুমকি বিশ্লেষন করে করনীয় নির্ধারন করে।
২.জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (JIB)
এরা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সবচেয়ে বড় আর ক্ষমতাধর ঈশ্বর।এরা আই এস আই এর অন্যতম অপারেশনাল বাহু । এরাই আই এস আই পলিটিক্যাল উইং নামে সু/কুপরিচিত।তাদের অন্যতম কাজ পাকিস্তানের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক গতিবিধি পর্যবেক্ষন করা এবং সেই সাথে পার্শবর্তি দেশেসমুহের রাজনৈতিক ঘটনা নজরদারিতে রাখা এবং প্রয়োজনবোধে সেই সব দেশের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে হস্তক্ষেপ করা। এদের ৩ টি সাব সেকশন একটি ভারত সংক্রান্ত,একটি এন্টি টেরোরিজম এন্ড ভিআইপি প্রটেকশন,একটি অন্যান্য অপারেশন।
৩.জয়েন্ট কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (JCIB)
বৈদেশিক গোয়েন্দা ততপরতা পরিচালনাকরা এদের দায়িত্ব। মধ্য এশিয়া,দক্ষিন এশিয়া, আফগানিস্তান,মধ্যপ্রাচ্য,ইসরায়েল ও রাশিয়ায় তথ্য সংগ্রহ করা।এছাড়া বিদেশে অবস্থানকারী পাকিস্তানী কুটনীতিক ও অন্যদেশের কুটনীতিকদের নজরদারী করাও এই বিভাগের কাজ।কিছুদিন আগে ওয়াশিংটনে পাকিস্তানী রাস্ট্রদুতের মেমোগেট কেলেংকারী এরা স্পট করে।
৪.জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স নর্থ (JIN)
।জুম্মু কাশ্মীরে আই এস আই এর যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করা এই বিভাগের দায়িত্বে।এরা কাশ্মীরিদের মোটিভেশন প্রদান,ট্রেনিং ক্যাম্প পরিচালনা, প্ল্যান তৈরিতে সহায়তা,গোলাবারুদ সরব্রাহ ছাড়াও কাশ্মীর উপত্যাকায় ভারতি সেনা বাহিনীর সকল মুভমেন্ট এর উপর নজর রাখে।
৫.জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স মিসেলিনিয়াস (JIM)
বিশ্বের বিভিন্ন অংশে ক্ল্যান্ডেস্টাইন কভার্ট অপারেশন চালানো ও যুদ্ধকালীন গোয়েন্দাবৃত্তি পরিচালনা এই বিভাগের কাজ। এই বিভাগ মুলত পারমানবিক প্রযুক্তি,মেসাইল প্রযুক্তি,সমৃদ্ধ প্লুটোনিয়াম সংগ্রহ করার কাজে নিয়োজিত।৮০ ও ৯০ এর দশক জুড়ে রাশিয়া চেক প্রজাতন্ত্র,পোল্যান্ড,উত্তর কোরিয়া সহ বিভিন দেশে ব্যাপক ক্ল্যান্ডেস্টাইন অপারেশন পরিচালনা করে পাকিস্তানি গুপ্তচরেরা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন তথ্য সংগ্রহ করে আনে।তারা এমন কি উত্তর কোরিয়া থেকে পারমানবিক প্রযুক্তির বদলে জাহাজ ভর্তি উত্তর কোরিয়ান ক্ষেপনাস্ত্র সংগ্রহ করে আনে।
৬.জয়েন্ট সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (JSIB)
পাকিস্তানের সকল ওয়ার্লেস স্টেশনের ডেপুটি ডিরেক্টর এদের লোক। এরা ওয়ার্লেস ম্যাসেজ ইন্টার্সেপ্ট মনিটরিং,ফোনে আড়িপাতা,ছবি তোলা, চেইন সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স কালেকশন স্টেষন পরিচালনা, মাঠ কর্মীদের কমিউনিকেশন সাপোর্ট দেয়ার দায়িত্ব পালন করে। এছাড়া পার্শবর্তি দেশগুলির সকল কমিউনিকেশন চ্যানেল মিনিটরিং ও ইন্টার্সেপ্ট করে তথ্য সংগ্রহ করে। এরা ভারত পাকিস্তান সীমান্তে বরাবর ও কাশ্মীরে একগুচ্ছা কমিউনিকেশন ট্রাকিং স্টেশন পরিচালনা করে।
ইসলামাবাদ,করাচী,পেশোয়ার, লাহোর, কোয়েটায় এদের অফিস রয়েছে।
৭.জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স টেকনিক্যাল ডিভিশন (JIT)
যরদুর জানা যায় এরা বিস্ফোরক ও কেমিকেল ওয়ার্ফেয়ার নিয়ে কাজ করে।
এই ৭ টি ছাড়াও জয়েন্ট ডিভিশন অফ টেলনিক্যাল ইন্টেলিজেন্স নামে একটি শাখা আই এস আই পরিচালনা করে যারা মুলত বিভিন্ন ট্রেনিং এর সাথে জড়িত।
ট্রেনিং ও রিক্রুটমেন্টঃ আই এস আই এর কর্মীরা সাধারনত সেনা বাহিনীর এস এস জি,নৌ বাহিনীর ও বিমান বাহিনী থেকে আসে।।তবে নিচু স্তরের কর্মীদের অনেক সমইয় প্যারা মিলিটারি ও পুলিশ বাহিনী থেকেও নেয়া হয়। সিভিলিয়ানদের মধ্যে থেকে নেয়ার ক্ষেত্রে ফেডারেল রিপাব্লিক সারভিস কমিশন এর অধীনে বিজ্ঞাপন দেয়া হয় এবং এরা মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্সের কর্মচারী হিসাবে বিবেচিত হয়। পরীক্ষা শেষে বাছাইকৃত দের তালিকা আই এস আই;র কাছে চেক করার জন্য দেয়া হয় ও ব্যাকগ্রাউন্ড চেকিং শেষে মৌখিক ইন্টর্ভিউর মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়া শেষ হয়।
ট্রেনিংঃ
রিক্রুট হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পড় নির্বাচিত ব্যাক্তিকে প্রয়োজন ভেদে সল্পমেয়াদি ও দীর্ঘ মেয়াদি ট্রেনিং প্রদান করা হয়। সল্প মেয়াদে ১৫ দিনের ট্রেনিং এ প্রধানত রিক্রুটের মনবল বৃদ্ধির ব্যাবস্থা করা হয় পাশাপাশি,দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ,ইসলামিক অনুপ্রেরনা,সাধারন কিছু বিষয় যেমন ক্ল্যাসিফায়েড ইনফর্মেশন কি,ছোটখাটো প্রযুক্তির ব্যাবহার,নজরদারির সাধারন কৌশল, বহির্দুনিয়া আর গোয়েন্দা জগতের পার্থক্য ব্যাখ্যা,প্রতিপক্ষের গোয়েন্দা চেনার উপায়,গোয়েন্দা জগতে শ্ত্রু বা বন্ধু নেই সবাই প্রতিদন্দ্বি,সাধারন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যাবহার যেমন রেডিও ট্রান্সমিটার ব্যাবহার ইত্যাদি শেখানো হয়।
এরপর আই এস আই ট্রেনিং স্কুলে তাদের ১ বছরের ট্রেনিং এ এডমিন্সট্রেটিভ, বিদেশে ক্ল্যান্ডেস্টাইন অপারেশন ট্রেনিং,পালানোর ও গ্রেফতার এড়ানোর কৌশল,ছদ্দবেশ নেয়ার কৌশল,কাভার তৈরী করার উপায়,খালি হাতে আত্মরক্ষা,যোগাযোগ তৈরি,নেটোয়ার্ক তৈরি সহ প্রয়োজনিয় বিষয় শিক্ষা দেয়া হয়।
বিদেশের মাটিতে টার্গেট নির্বাচন ও কার্যক্রম পরিচালনা পদ্ধতিঃ
ধর্মীয় উন্মাদনা ব্যবহার।
মতাদর্শগত দুর্বলতা ব্যবহার।
স্থানীয় সংঠিত অপরাধী চক্রকে নিজের নেটওয়ার্কে একিভুতকরন ।যেমন মুম্বাইয়ে ডি কোম্পানী।
সাধারনত বেসিক কিছু বিষয়ের যেমন সরকার দ্বারা নির্যাতিত ব্যাক্তি বা গোস্টিকে ব্যবহার।
নারী সঙ্গ ও অর্থ লোভী ব্যক্তি।
ধর্মীয় দান দাক্ষিন্য করে এমন সঙ্গঠন ব্যবহার।
আক্রমনাত্তক গোয়েন্দাবৃত্তি যেমন পালটা হামলা,বোমা বিস্ফোরন,মানসিক যুদ্ধ,সামাজিক অস্থিরতা তৈরী,অন্তর্ঘাত পরিচালনা করা।
আই এস আই কে কখনো রীতিমত ব্যবসায়িক ব্রান্ড নেমের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে
পাকিস্তানী মডেল ভিনা মালিকের নগ্ন ছবিতে আই এস আই ট্যাটু ব্যাবহার
এপর্যন্ত পরিচালিত গুরুত্বপুর্ন অপারেশনঃ
১৯৬০ এর দশকে সি আই এ ও কানাডা সরকারের সাথে সম্মিলিত ভাবে স্বাধীন খালিস্তান আন্দোলনের জন্য গ্রাউন্ডওয়ার্ক করা এবং পরিকল্পনা প্রনয়ন।
৭০এর দশকের শেষে পাকিস্তানে লিবিয়ান সামরিক এ্যাটাশে কর্নেল হুসেই ইমাম মোবারক জেলে বন্দী ভুট্টোর অনুগত দুইজন নির্বাসিত পাকিস্তানী সাথে জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান পরিকল্পনা করার সময় আই এস আই এদের সপট করতে সক্ষম হয় এবং দুই পাকিস্তানীকে গ্রেফতার করে।
১৯৭৯ সালের ২৬শে জুন পাকিস্তানের ফরাসী রাস্ট্রদুত ও ফার্স্ট সেক্রেটারী গোপনে কাহুটা পারমানবিক প্রকল্পের ছবি তোলার চেস্টা করলে আই এস আই’র হাতে ধরা পরে এবং পরে জানা যায় যে পাকিস্তানের পারমাবিক প্রকল্পের অগ্রগতির তথ্য সংগ্রহের জন্য ঐ দুইজন সি আই এ’র রিক্রুটেড ছিলো।
আশির দশকে ইসলামাবাদে সোভিয়েত ইউনিয়নের এ্যাম্বেসীতে আই এস আই একজন ইনফর্মার ঢুকাতে সক্ষম হয় এবং তার কাছে জানতে পারে দুতাবাসের থার্ড সেক্রেটারী কারাকোরাম হাওইওয়ের উপর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য জনৈক ঈজাজকে ব্যাবহার করছে।পরে সেই লোক কে স্পট করে তার মাধ্যে সোভিয়েত দুতাবাসকে আই এস আই দীর্ঘ দিন ভুতা তথ্য সরবরাহ করে।
আশির দশক জুড়ে আই এস আই সাফল্যের আথে আফগানিস্তানে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে আফগান মুজাহেদিনদের অস্ত্র সরবরাহ ট্রেনিং প্রদান করে। এসময় তারা কয়েক হাজার স্ট্রিঙ্গার সারফেস টু এয়ার মিসাইল কেজিবি রেড আর্মির চোখ এড়িয়ে আফগানিস্তানে সাপ্লাই করে।
কিন্তু বেশিরভাগ অস্ত্র ছিলো সোভিয়েত ইউনিয় এ তৈরী যা আই এস আই মোসাদের কাছে থেকে সংগ্রহ আফগানদের দেয় যাতে আমেরিকার বিরুদ্ধে সরাসরি অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ রাশিয়ানরা না করতে পারে। এই পুরো ঘটনার উপর টম হ্যাংক্স অভিনিত “চার্লি উইলসন্স ওয়ার” নামের একটা হলিউড মুভি আছে।
আশির দশকে ইসলামাবাদে ইন্ডীয়ান দুতাবাদের স্কুলের এক শিক্ষিকার বেশে “র” এর অফিসার পাকিস্তানী পারমানবিক প্রকল্পে কাজ করা এক ইঞ্জিয়ারের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতো।দুইজনকেই আই এস আই স্পট করতে সক্ষম হয়।
ইলাম দীন নামে একজন “র” গুপ্তচর কে আই এস আই ধরতে সক্ষম হয় ।তার সাহায্যে পুরো একটা “র” স্পাই রিং আই এস আই এর হাতে ধরা পড়ে এবং পরে ভারত কে পাকিস্তানের সমরস্ত্র সম্পর্কে ভুয়া তথ্য সরব্রাহে তাদেরকে বাধ্য করা হয়।
আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ইন্দীরা গান্ধী সোভিয়েতদের গোপন পারমানবিক সাবমেরিন ঘাঁটি তৈরীর চুক্তি করার চেস্টা করলে আই এস আই তা ধরে ফেলে এবং সি আই এর কাছে ফাঁস করে দেয়।
১৯৭৯ সালে ইরানে মার্কিন দুতাবাসে জিম্মী উদ্ধারে অভিযানের জন্য সি আই এ’র লোকজন মার্কিন দুতাবাসে চাকরি রত এক পাকিস্তানী কুকের কাছে থেকে তথ্য সংগ্রহ করে।
১৯৮২ সালে আই এস আই মোসাদ ও সি আই এর যৌথ দল প্যালেস্টাইন ও লেবাননের জন্য পাঠানো সোভিয়েত অস্ত্রের চালান ভুমধ্য সাগরে স্পট করে এবং ধরে ফেলে।পরে সেই অস্ত্র আফগানিস্তানে পাচার করে দেয়।
১৯৯৩ এ মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জ ব্লাস্টের সাথে জড়িত থাকা ও দাউদ ইব্রাহিমের ডি কোম্পানীকে সাংপাঙ্গ সহ করাচীর সেফ হাউজে দীর্ঘ দিন নিরাপদের রাখা।
আফগান যুদ্ধে সোভিয়েতদের পরাজয়ের পর শুন্যতা ব্যাবহার করে আফগানিস্তানে নিয়ন্ত্রন প্রতিস্টা এবং ১৯৯৪ এ আফগান গৃগ যুদ্ধে পাকিস্তানের মুখপাত্র হিসাবে তালেবান দের তৈরী।
১৯৯৩ সালে বসনিয়ার যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর জন্য প্রচুর অস্ত্র সরবরাহ।
তালেবানদের প্রথমসারির ১৫ জন নেতার মধ্যে ৭ জনই আই এস আই কর্মী।
এছাড়া ভারতের মাটিতে বহু জঙ্গী হামলা পরিচালনা ও ভারতীয় জঙ্গীদের নিরাপদ অভয়ারন্য হিসাবে পাকিস্তানে আশ্রয় প্রদান।
২০১১ তে পাকিস্তানে এক সাংবাদিক কে হত্যা।
ব্যার্থতাঃ
১৯৬৫ সালের পাক ভারত যুদ্ধে কাশ্মীরে অপারেশন জিব্রাল্টারে সাফল্য ধরে রাখার জন্য স্থানীয় জনগনের সমর্থন যোগার করতে সম্পুর্ন ব্যার্থ হয়।
১৯৭০ এ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর প্রত্যাশা অনুযায়ি পাকিস্তানের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এর বিরুদ্ধে অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে মোটামুটি অবস্থানে নিয়ে যেতে ব্যার্থ হয়।
১৯৮১ সালে লিবিয়ানরা মিশর আর শাদ এর সাথে যুদ্ধের জন্য অবসরে যাওয়া পাকিস্তানী সৈনিকদের একটা বিশ্ল দললে মার্সেনারি হিসাবে ভাড়া করে যুদ্ধে পাঠিয়ে দেয় যা আই এস আই অনেক পরে জানতে পারে ততদিনে বিরাট সংখ্যক পাকিস্তানী সামরিক অফিসাররা চাক্রি ছেড়ে বেশি টাকার লোভে লিবিয়াতে ভাড়াটে সৈনিক হিসাবে পাড়ি জমিয়েছে।
১৯৮৪ সিয়াচেন হিমবাহ দখলের জন্য ব্রিটিশ কোম্পানীর কাছে থেকে স্নো ওয়ার্ফেয়র গিয়ার কেনার খবর গোপন রাখতে ব্যার্থ হয় আই এস আই। যার ফলে ভারতীয় সেনা বাহিনী ও “র” অপারেশন মেঘদুত সাফল্যের সাথে পরিচালনা করে সিয়াচেন হিমবাহে পাকিস্তানের আগেই অ্যাডভান্টেজ পজিশনে চলে যেতে সক্ষম হয়।
মোল্লা ওমরকে বুঝিয়ে ওসামা বিন লাদেন কে আমেরিকার হাতে তুলে দিতে ব্যার্থ হয়।
বেনজির ভুট্টো হত্যাকান্ড রোখতে ব্যার্থ।
করাচীতে মার্কিন কুটনীতিক কে অনুসরন করতে গিয়ে তার গুলিতে এক মেজর সহ দুই আই এস আই কর্মী মৃত্যু।
অন্যতম সেরা এজেন্টঃ
৯০ এর দশক জুড়ে আই এস আই পশ্চিম ও পুর্ব ইউরোপ ও দক্ষিন পুর্বএসশিয়ায় মিসাইল টেলনোলজি ও উন্নত পারমানবিক প্রযুক্তির সন্ধানে ব্যাপক অনুসন্ধান ও পাচারের নেটওয়ার্ক তৈরি করে। এসব ক্ষেত্রে সাফল্যের পাশাপাশি আই এস আই’র গুপ্তচরেরা অনেক অপরাধমুলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পরে।মেজর জেনারেল সুলতান হাবিব নামের এক আই এস আই কর্মী মস্কোতে পাকিস্তান দুতাবাসে ডিফেন্স এ্যাটাশে হিসাবে কাজ করার সময় সেন্ট্রাল এশিয়ান রিপাব্লিক এর দেশসমুহ,পোল্যান্ড,চেকোশ্লোভাকিয়াতে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত পারমানবিক প্রযুক্তি ও বিশুদ্ধ প্লুটোনিয়াম চুরি ও সংগ্রহের জন্য একাধিক ভাবে ধারাবাহিক ক্ল্যান্ডেস্টাইন অপারেশন পরিচালনা করে।মস্কো অপারেশন শেষে এরপর তিনি উত্তর কোরিয়ায় রাস্ট্রদুত হিসাবে যোগ দিয়ে সেখানে পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার যৌথ পারমানবিক ও মিসাইল অপারেশনের তত্বাবধান করেন। সেসময় উত্তর করিয়া থেকে জাহাজে বোঝাই করে দূর পাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র পাকিস্তানে চোরাচালানে নেতৃত্ব দেন।
ডিফেকশন এবং ডায়মন্ড আস্ত্র ও ড্রাগ ব্যাবসাঃ
সে সময় পাকিস্তানের এক্সপারটদের ক্ষেপনাস্ত্র ট্রেনিং এর জন্য উত্তর কোরিয়ায় পাঠানো হয় আর উত্তর কোরিয় টেকনিশিয়ানরা পারমানবিক অস্ত্র তৈরীর জন্য পাকিস্তানে ট্রেনিং নিতে আসে। এই অপারেশন এর ধারাবাহিকরা ধরে রাখতে উত্তর কোরীয়ায় পাকিস্তন দুতাবাসের থার্ড সেক্রেটারি হিসাবে ক্যাপ্টনে (অব) শাফাকাত চীমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। সেই সুযোগে ক্যাপ্টেন চিমা পরমানু অস্ত্র ও মিসাইল তৈরীর প্রযুক্তি অর্থের বিনিময়ে ইরানি ও ইরাকি ইন্টেলিজেন্স এজেন্সীর কাছে সরবরাহ করে। শুধু তাই নয় রাশিয়া ও সি এস আর দেশগুলি থেকে প্রচুর ইরেনিয়াম ও খুচ্রা যন্ত্রাংশ পাকিস্তানী এজেন্টরা সংগ্রহ করে ইরানি কাছে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়। পরে ক্যাপ্টেন চিমার অধীনের গ্রুপ্টাকে দেশে ফেরার নির্দেশ দিলে ক্যাপ্টেন চিমা পালিয়ে চিনের জিনজিয়াং এ চলে আসে।পরে পাকিস্তানের অনুরোধে চীনারা তাকে গ্রেফতার করে ইসলামাবাদ পাঠিয়ে দেয়।এর পরে তার আর তার বিক্রি করা টাকার কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি।তদন্তে বের হয়ে আসে ক্যাপ্টেন চিমা পিপিপি’র সর্বোচ্চ পর্যায়ের সুপারিশে উত্তর কোরীয়ায় পোস্টিং পেয়েছিলেন।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কাজ করার সময় সেখানে থাকে আই এস আই এজেন্টরা আইভরি কোস্ট,সিয়েরোলিয়ন ও কঙ্গোতে অবৈধ হীরা ও অস্ত্র ব্যবসায় জড়িয়ে পরে।
বাংলাদেশে আই এস আইঃ
“ভারত পুর্ব পাকিস্তান নিয়ে যাচ্ছে নিয়ে যাক,৫ বছরের মধ্যে আমরা সোনার বাংলা আমাদের কাছে ফিরিয়ে আনব,সোনার বাংলা শুধু আমাদের আর কারো নয়”
– জুলফিকার আলী ভুট্টো।
বাংলাদেশে আই এস আই একটি বেশ বহুল চর্চিত নাম।কাভার্ট ও নন কাভার্ট গুপ্তচর হিসাবে বাংলাদেশে ৪৫০ কভার্ট আই এস আই অপারেটর নিয়োজিত আছে। বেতনভুক্ত ইনফর্মার,সংখ্যালঘু বিহারী ও আদর্শগত ভাবে অত্যন্ত সহানুভুতিশীলদের ধরলে এই সংখ্যা ১ লক্ষর অধিক হবে।কিছু ইসলামিক দাতব্য প্রতিস্টান ও অর্থনৈতিক সংস্থা সাধারনত এদের উর্বর চারনক্ষেত্র।এছাড়া বেশকিছু ন্যাশানাল ও মাল্টি ন্যাশানাল কোম্পানীতে বড় পদে আই এস আই কর্মকর্তারা কাভার্ট অপারেটর হিসাবে আছে।বলা হয়ে থাকে ধানমন্ডি সিটি কলেজের কাছে একটি বহুতল টাওয়ারে অনেক আই এস আই’র
বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে আই এস আই এর অনেক সাফল্য ব্যার্থতা জড়িয়ে আছে
দুস্টলোকেরা বলে বাংলাদেশের একজন সাবেক রাস্ট্রপতি ১৯৭১ সালে আই এস আই’র ডীপ কাভার অপারেটর ছিলেন।যদিও তার সার্ভিস রেকর্ড বলে তিনি মাত্র ৫ বছর আই এস আই তে ছিলেন এবং ১৯৬৩ তে সংস্থা থেকে চলে যান। আর একজন রাস্ট্রপতি ডবল এজেন্ট হিসাবে দীর্ঘদিন থাকার পর আই এস আই তাকে সাময়িক ভাবে ত্যাগ করে।
বলা হয়ে থাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হত্যাকান্ড সি আই এ ও আই এস আই এর যৌথ প্রকল্প। নিজ ডিপ কাভার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে যুদ্ধ শেষ হওয়ার আড়াই মাস আগে ফারুক ও একমাস আগে খন্দকার রশিদ মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেয়। যেখানে ৭১ এ বাঙ্গালী অফিসারদের হয় গৃহবন্দী নয়তো জেলে রাখা হতো সেখানে রশিদ ঐ সময় পাকিস্তানের পোস্টিং থেকে ছুটি নিয়ে স্ত্রী সহ প্রথমে দেশে প্রবেশ করে পরে আগরতলা যায় এবং পরে জিয়াউর রহমানের জেড ফোর্সের সাথে ডিসেম্বরে বাংলাদেশের প্রবেশ করে। ফারুক আগস্ট মাস পর্যন্ত দুবাইয়ে ট্রেনিং এ থাকলেও শেষ সময়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।
১৯৭৬ এ বাংলাদেশ এর নাম ইসলামিক রিপাব্লিক অব ইস্ট পাকিস্তান রাখার পরিকল্পনা করলেও মাওলানা ভাসানীর দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
জেনারেল হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ কে পুরানো সম্পর্কের জের ধরে “র” এর কব্জা থেকে নিজেদের কব্জায় নিয়ে আসা।
বাংলাদেশ কে ব্যবহার করে উত্তরপুর্ব ভারতের স্বাধীনতাকামী গেরিলা গ্রুপগুলিকে অস্ত্র সরব্রাহ।
পশ্চিম সীমান্ত নজরদারিতে থাকায় বাংলাদেশের সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে নিজেস্ব নেটওয়ার্ক এর সাথে যোগাযোগ রক্ষা ও ভারতের জন্য সন্ত্রাসের প্যাকেজ রফতানী করা।
২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সম্পৃক্ততা
১৯৯৬ এ নেদারল্যান্ড প্লপ্ট,১৯৯৭ এ নেপালি আত্মঘাতী বোমারু আই এস আই কর্মী শ্রীবাস্তব এর সাহায্যে ,১৯৯৯ ১০ মিলিয়ন ডলারে এল টিটি ই আত্মঘাতী ভাড়া করা সহ আই এস আই অনেক বার বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে হত্যার একাধিক চেস্টা করে।
বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে আই এস আই’র কর্মীরা সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের দরবেশ উপাধি পাওয়া এক নেতা বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সাথে আই এস আই’র প্রধান কন্ট্যাক্ট।দুস্ট লোক বলে বি এন পি জামাতের শেষ সময়ে এসে আই এস আই যখন নিশ্চিত হয় শেখা হাসিনা আগামিতে বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসছেন তখন তারা দরবেশ এর মারফত আওয়ামী লীগ কে ৩০০ কোটি টাকা নির্বাচনি তহবিল প্রদান করে।যা “র” খুব ভালো ভাবে নেয় নি। ফলাফল তত্বাবধায়ক আমলে আওয়ামী লীগে RATS এর উত্থান ও শেখ হাসিনাকে কোন্ঠাসা করার চেস্টা।
বাংলাদেশ এ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এক ভাই আই এস আই’র অন্যতম প্রধান কন্ট্যাক্ট।
আর জামাতের কথা বলে নাহয় সময় নস্ট নাই করি ক্বেন… কারন সিনিয়ার নেতাদের মধ্যে কম বেশি সবাই পাকিস্তানের প্রতি শুধু সহানুভুতিশীলই না… তাদের সাথে যেকোন পর্যায়ে সহযোগিতা করতে ও সহযোগিতা নিতে প্রস্তুত থাকে।
আরো সংযুক্তিঃ
১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে হরতাল কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে জাসদের মিছিল চলাকালে শিবিরের সশস্ত্র হামলায় সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে জাসদ নেতা মুকিম মারাত্মক আহত হন এবং মারা যান। ঐ হামলায় প্লট আই এস আই’র করা ছিলো।
চট্টগ্রামে এইট মার্ডার ।চট্টগ্রামের বদ্দরহাটে শিবির ক্যাডাররা মাইক্রোবাসের মধ্যে থাকা ৮ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে প্রকাশ্য দিবালোকে ব্রাশফায়ার করে নৃশংসভাবে হত্যা করে।নাসির গ্রুপের নাসির সহ প্রত্যেকে আই এস আই ট্রেনিং ক্যাপমের সদস্য ছিলো।
৫ মে, ২০০৭ চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি আর্মি ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থাপনা ভিডিও করার সময় আর্মি সদস্যরা শিবিরের ২ নেতাকে ভিডিও ফুটেজসহ আটক করে।
চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা থেকে শিবির ক্যাডার মাহমুদুল চৌধুরীকে পুলিশ সদস্যরা একে-৪৭ এর ৩৩টি বুলেটসহ গ্রেপ্তার করে। যার মধ্যে ১৭টি বুলেট দেশীয় কোনো কারখানায় তৈরি হয়েছে বলে সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল মত প্রকাশ করে।
১৯৯৯ রাবি ছাত্র শিবির সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর পাকিস্তানে তৈরী রিভলবার, গুলি ও গান পাউডার সহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়।তার কোয়েটায় টেনিং নেয়ার অভিজ্ঞতা আছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি নামে একটি দল আছে যাদের ১২,০০০ কর্মী সোভিয়েত বিরোধী যুদ্ধ ও পরবর্তিতে আফগান গৃহযুদ্ধে লড়াঈ করে ।এদের ট্রেনিং রিক্রুটমেন্ট আসা যাওয়ার সব খরচ আই এস আই বহন করে।
১৯৯২ সাল থেকে রোহিঙ্গা রিফিউজিদের মধ্য থেকে বাছাই করে তাদের ট্রেনিং দিয়ে কাজে লাগায় আই এস আই।
চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র যে জেটিতে ভিড়ল এই জেটিটা শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় ছিল। শিল্পমন্ত্রীর অনুমতি ছাড়া বা জানা ছাড়া অস্ত্র চট্টগ্রামের জেটিতে ভিড়তে পারেনা। আর তখন শিল্পমন্ত্রী ছিলেন জামায়াতে ইসলামের মতিউর রহমান নিজামী।
১২৫ টা গুপ্ত জঙ্গী সংঠন আই এস আই’র হাতে তৈরী যাদের অনেকের বাংলাদেশে শাখা আছে।
মধ্যযুগের একজন বিখ্যাত আরব মনীষির নামে তৈরি করা একটি দাতব্য সংগঠন ও চিকিৎসা কেন্দ্রের নামে আসা ফান্ড এর বড় একটা অংশ স্থানীয় কর্মী আর ইনফর্মারদের বেতন ভাতায় খরচ হয়।
অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে টার্গেট করে আক্রমনের নির্দেশ দেন বাংলাদেশের বড় ইসলামিক আলেমের ছদ্দবেশে একজন আই এস আই’র কর্মী।
রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইং এর আদ্যপান্ত :
বাংলাদেশে এ ৫ টি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা সর্বাধিক সক্রিয় আছে বলে বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইং কে প্রধানতম ধরা হয়ে থাকে। এই সংস্থা বাংলাদেশের অনেক ইতিহাস ঘটনঘটনের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত। (সতর্কীকরনঃ এখানে আমি এমন কিছু তথ্য দিয়েছি যা হয়তো মতাদর্শগত বা অন্যকোন কারনে কারো কারো ভালো নাও লাগতে পারে সেক্ষেত্রে তার ভিতরে আর না ঢুকাই ভালো)
পুর্ব কথাঃ
১৯৬২ সালের ইন্দো চীন সীমান্ত সংঘাতে ব্যার্থতার পরে বৃটিশদের সময় থেকে বৈদেশিক গোয়েন্দা ততপরতা পরিচালনার দায়িত্ব পালন কারী আইবি র পরিবর্তে জহর লাল নেহেরু ভারতে জন্য একটি ভিন্নধর্মী ও সু-সঙ্গঠিত পেশাদার বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা সৃস্টির প্রয়োজনিয়তা অনুভব তারই ধারাবাহিকতায় ইন্দীরা গান্ধী ক্ষমতায় আসার পরে ১৯৬৮ সালে ২১ সেপ্টেম্বর প্রাক্তন বৃটিশ ইন্টেলিজেন্স অফিসার ও আইবি র ডেপুটি ডাইরেক্টর আর এন কাও এর নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় তৈরি করা হয় ভারতের প্রধান বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইং সংক্ষেপে “র” । র এর প্রধান কে একজন ক্যাবিটে সেক্রেটারি পদমর্যাদা সম্পন্ন সচিব হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়।
নয়া দিল্লির লোদী রোডের সদর দফতর
থিমঃ রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইং এর থিম ২৪০০ বছর পুর্বের মৌর্য সম্রাজ্যের বিখ্যাত স্ট্রাটেজিস্ট বিষ্ণগুপ্ত চানক্যের প্রনীত রাস্ট্র ও বৈদেশিক নীতির উপর গড়ে উঠেছে। “র” এর প্রতিটি পরিকল্পনা প্রনয়ন ও অপারেশনাল অ্যাক্টিভিটি চানক্য প্রদর্শিত নীতিসমুহের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়ে থাকে।সাম,দান,ভেদ,দন্ড চানক্যের অর্থশাস্ত্রের এই চারটি পন্থা ভারত তথা “র” এর বিদেশনীতির ভিত্তি।
শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী “র” এর কার্যক্রমের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময়ে উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তার অন্যতম মেন্টর লুইস এফ হালির একটি উধতি কোট করে বলেন “’Ability to get what one wants by whatever means: eloquence, reasoned arguments, bluff, tirade, threat or coercion, as well as, by arousing pity, annoying others, or making them uneasy”
বর্তমান প্রধান সঞ্জিব ত্রিপাঠি
লক্ষ ও উদ্দেশ্য
পার্শবর্তী দেশসমুহ যাদের সাথে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা সরাসরি জরিত তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে ঐ সব দেশের বৈদেশিক নীতি নির্ধারনে ভুমিকা রাখা।
প্রবাসে অবস্থানকারী ভারতীয় বা ভারতীয় বংশভুত জনগোস্টীকে ব্যাবহার করে আন্তর্জাতিক সমর্থন সহানুভুতি নিজের পক্ষে নিয়া আসা।
পশ্চিম ইউরোপ ও যুক্তরাস্ট্র থেকে পাওয়া পার্শবর্তি দেশগুলি বিশেষত পাকিস্তানের সমরাস্ত্র সাপ্লাই পর্যবেক্ষনে রাখা ও সীমিত করা চেস্টা।
সংগঠনঃ
রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইং এর সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে যতদুর জানা যায় তা মার্কিন সি আই এ ধাঁচে গঠিত। একজন ক্যাবিনেট সেক্রেটারির(রিসার্চ)পদর্যাদা সম্পন্ন প্রধানের অধীনে বিভিন্ন ডেস্ক ও অপারেশনাল গ্রুপে বিভক্ত।বিভিন্ন ডেস্কের অধীনস্তরা বেশির ভাগ চীন ও পাকিস্তান সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ।“র”প্রধান প্রাশনিক ভাবে মন্ত্রী পরিষদ সচিবের কাছে রিপোর্ট করেন এবং মন্ত্রী পরিষদ সচিব প্রধানমন্ত্রীকে রিপর্ট করে থাকে। তবে ক্ষেত্র বিশেষে “র” সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও রিপোর্ট করে থাকে। এছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা উপদেস্টার কাছেও রুটিন মাফিক প্রতিদিন “র” প্রধান রিপোর্ট দেন।
“র” এর সংঠন ভৌগলিক এলাকা ও অপারেশনাল কার্যক্রমের ভিত্তিতে বিভক্ত।
দুইজন বিশেষ সচিবের ও একজন ডাইরেক্টর পদমর্যাদার এ্যাভিয়েশন রিসার্চ সেন্টারের জন্য
চারজন অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা বিভিন্ন ভৌগলিক এলাকার জন্য
এছাড়া ৪০টি ডেস্কে বিভক্ত কার্যক্রমের জন্য কমপক্ষে ৪০জন জয়েন্ট সেক্রেটারী পদমর্যাদা কর্মকর্তা বর্ত্মানে কর্মরত।
নয়াদিল্লীর লোদি রোডের সদর দফতর –আঞ্চলিক সদর দফতর-বিদেশে অবস্থিত স্টেষন অফিস-মাঠকর্মী। বিদ্দেশে অবস্থিত স্টেষন অফিস গুলি একএকজন কন্ট্রোলিং আফিসারের অধীনে যারা মাঠ পর্যায়ে অবস্থানকারী কর্মীদের অ্যাসাইন্ট প্রদান,নিয়ন্ত্রন,সুপারভিশন তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষন করে থাকে। বিভিন্ন সুত্র থেকে ফিল্ড অফিসার ও সহকারী ফিল্ড অফিসাররা তথ্য সংগ্রহ করে সিনিয়ার ফিল্ড অফিসারকে দেয় সিনিয়ার ফিল্ড অফিসার বা স্টেশন অফিসার সেই প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাছাই করে আঞ্চলিক বা সদর দফতরের বিভিন্ন ডেস্কে প্রেরন করেন।এরপর ডেস্ক প্রধান সেই তথ্য গুরত্ব বিচারে আরো উপরে প্রেরন করেন। “র” এ কর্মীদের কে এজেন্ট হিসাবে না বলে রিসার্চ অফিসার বলা হয়। এই গোয়েন্দা সংস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিমানে নারী অফিসার কাজ করে থাকে। বগত বছরে চীন ও পাকিস্তান ডেস্ক ভেঙ্গে আলাদা ভাবে চীনের জন্য একটি ডেস্ক করা হয়েছে।
এস এফ এফঃ এস্টাবলিশমেন্ট ২২ “র” পরিচালিত বিশেষ বাহিনী।যারা ক্ল্যান্ডেস্টাইন অপারেশন পরিচালনা করে থাকে।
রিক্রুটমেন্টঃ
স্বাধীন সংস্থা হিসাবে “র” এর কর্মকর্তা বা মাঠ পর্যায়ে কর্মী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সাধারনত ধরাবাঁধা কোন নিয়ম নেই। সাধারনত ভারতীয় সেনা,নৌ,বিমান বাহিনীর স্পেশালফোর্স,পুলিশ বাহিনী, আই এ এস ক্যাডার,আই বি,সিবিআই অথবা মেধা বিচারে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজ্যুয়েট ও শিক্ষা প্রতিস্টান থেকেও নেয়া হয়ে থাকে। “র” এ কর্মরত চাকরিকে অ্যানালাইসিস ক্যাডার সার্ভিস বা আরএএস বলা হয়।
আই এ এস (বাংলাদেশি মান্দন্ডে বি সি এস) অফিসারদের মধ্য থেকে যারা “র” তে যেতে ইচ্ছুক তাদের ক্যাবিনেট সেক্রেটারিয়েট এর অধীনে ডেপুটি ফিল্ড অফিসার DFO পদের পরীক্ষায় বসতে হয়.পরীক্ষায় উত্তির্নদের মধ্য থেকে মেধার ভিত্তিতে সেরাদের বেছে নেয়া হয় এরা সবাই রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস ক্যাডার নামে পরিচিত হয়। কমপক্ষে ৮ বছর DFO থাকার পরে তাকে পরবর্তি লেভেলে ফিল্ড অফিসার FO পদে পদায়ন করা হয়। কমপক্ষে ৫ বছর FO থাকার পর তাকে সিনিয়ার ফিল্ড অফিসার SFO (ক্লাশ ওয়ান) হিসাবে প্রমোশল করা হয়। এরপরের ধাপে স্টেষন প্রধান বা রেসিডেন্স অফিসার RO হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়।এরপর তাকে কোন ডেস্ক প্রধান হিসাবে “র” আঞ্চলিক দফতর,সদর দফতর এ রাখা হয় অথবা নিজ নিজ বাহিনী বা ভারতের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের যেকোন স্থানে পাঠানো হয়।
DFO FO SFO রা সরাসরি বিদেশের মাটিতে কর্মরত থাকে।তারা তাদের স্টেশন অফিসারের ভাগ করে দেয়া দায়িত্ব অনুযায়ি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে এবং ইনফর্মার হিসাবে স্থানীয় গুরুত্বপুর্ন ও প্রয়োজনিয় ব্যক্তিদের,ঐ দেশের গোয়েন্দা সংস্থা বা ঐ দেশে অবস্থানকারি তৃতীয় কোন দেশের গুপ্তচর কর্মীকে নিজের পক্ষে আনার চেস্টা করে।
বিদেশের মাটিতে টার্গেট নির্বাচন পদ্ধতিঃ
বিদেশে এজেন্ট অথবা ইনফর্মার রিক্রুট করবার ক্ষেত্রে সাধারনত ডবল এজেন্টদের প্রাধান্য দেয়া হয়।বিদেশের মাটিতে রিক্রুটমেন্টের জন্য চানক্যের অর্থশাস্ত্রর নির্দেশনা অনুযায়ি টার্গেট সিলেকশন করে তাকে রিক্রুট করার জন্য যে সব দুর্বলাতাকে কাজে লাগানো হয় তা হলো যৌনক্ষুধার প্রতি দুর্বলতা, অর্থর প্রতি দুর্বলতা, প্রতিশোধপরায়নতা,ক্ষমতার লোভ। এছাড়া
শাষকগোস্টির প্রতি অসন্তুস্ট নির্যাতিত ও নির্বাসিত এমন কাউকে।
ক্ষতিপুরন হতে বঞ্চিত ব্যাক্তি।
ন্যায়পরানয়তার কারনে প্রতিস্টান কর্তৃক বঞ্চিত ব্যক্তি।
জোরপুর্বক নিগ্রহের স্বীকার হওয়া নারী।
উচ্চাকাংখি সুন্দরী তরুনী।
সরকার কর্তৃক সম্পত্তি বা অর্থ বাজেয়াপ্ত হয়েছে এমন ব্যক্তি।
উপরের দুর্বলাতার কারনে ব্ল্যাকমেইলের স্বীকার হওয়া লোক।
সংখ্যালঘু জনগোস্টি।
প্রশিক্ষনঃ
রিক্রুট হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পড় নির্বাচিত ব্যাক্তিকে প্রয়োজন ভেদে সল্পমেয়াদি বেসিক ও দীর্ঘ মেয়াদি কালেক্টিভ ট্রেনিং প্রদান করা হয়। সল্প মেয়াদে ১০ দিনের ট্রেনিং এ প্রধানত রিক্রুটের মনবল বৃদ্ধির ব্যাবস্থা করা হয় পাশাপাশি বহির্দুনিয়া আর গোয়েন্দা জগতের পার্থক্য ব্যাখ্যা,প্রতিপক্ষের গোয়েন্দা চেনার উপায়,গোয়েন্দা জগতে শ্ত্রু বা বন্ধু নেই সবাই প্রতিদন্দ্বি,সাধারন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যাবহার যেমন রেডিও ট্রান্সমিটার ব্যাবহার ইত্যাদি।এই ট্রেনিং সাধারনত হরিয়ানার গুরুগাও এ ট্রেনিং স্কুলে প্রদান করা হয়। এছাড়া প্রশিক্ষিত অফিসারদের মুম্বাইয়ে ফিনান্সীয়াল ইন্টেলিজেন্স স্কুলে প্রশিক্ষন দেয়া হয়।
প্রাথামিক ট্রেনিং শেষ প্রয়োজনমাফিক দেরাদুনে ১-২ বছরের ফিল্ড ট্রেনিং প্রদান করা হয়।ফিল্ড ট্রেনিং এ আন্ডার কাভার অপারেশন,কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স,স্যাবোটেজ,জনমত ম্যানিপুলেট ও দন্দ্ব সৃস্টির কৌশল সহ অনেক বিষয়ে ব্যাপক ট্রেনিং প্রদান করা হয়। ট্রেনিং সেন্টারে সবাই নিজ নিজ নাম পরিচয়ের বদলে কোড ব্যবহার করে থাকে।
সরাসরি নিয়োগকৃত DFO দের সাধারনত বেসিক ও অ্যাডভান্স দুই ধরনের ট্রেনিং সম্পন্ন করার পর বিদেশে ডেপুটি ফিল্ড অফিসার হিসাবে পাঠানো হয়।।সংস্লিস্ট দেশের স্থানীয় রিক্রুটদের মেধা,গুতুত্ব ও কাজের ধরন বুঝে শুধু বেসিক অথবা অ্যাডভান্স ট্রেনিং উভয়ই দেয়া হয়।
কর্ম পদ্ধতিঃ
“যা বল প্রয়োগে অর্জন সম্ভব নয় তা ধোঁকা দিয়ে সিদ্ধ করা যায়,বিষাক্ত গোখারা সাপও কাক আর সোনার হারের ফাঁদে পরাজিত হয়।“ –চানক্য
তথ্য সংগ্রহ: কভার্ট ও নন কভার্ট উভয় পদ্ধতি ব্যবহার করে “র” তথ্যা সংগ্রহ করে থাকে।
আক্রমনাত্তক গোয়েন্দাবৃত্তি: “র” এলাকা ভেদে আক্রমনাত্তক গোয়েন্দা কৌশল পরিচালনা করে। এরমধ্যে গুপ্তচরবৃত্তি,মানসিক যুদ্ধ পরিচালন,অন্তর্ঘাতমুলক কর্ম কান্ড।
ক্ল্যান্ডেস্টাইন অপারেশনঃ সাম্রিক বাহিনীর স্পেশাল ফোর্স থেকে নেয়া বিশেষ প্রশিক্ষনপ্রাপ্তদের সহায়তায় গুপ্তহত্যা পরিচালনা করা হয়।
প্রতিগোয়েন্দাবৃত্তি: “র” দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে প্রতিবেশি রাস্ট্রগুলিতে প্রতিদন্দ্বি গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স পরিচালনা করে।
মেইল হ্যাকিং ও ইন্টার্সেপ্সহনঃ “র” আই টি এক্সপার্টরা নিয়নিত স্থানীয় গুতুত্বপুর্ন দফতর ও ব্যক্তির ইমেইল হ্যাক করে থাকে এবং পোস্টাল মেইল ইন্টার্সেপ্ট করে থাকে।
গুরুত্বপুর্ন স্থাপনার কাছাকাছি ট্রান্সমিটার স্থাপনঃ সংশ্লিস্ট দেশের গুরুত্বপুর্ন স্থাপনা যেমন বিভিন্ন বাহিনী সদর দফতর,সরকারী গুরুত্বপুর্ন অফিস ও অত্যন্ত স্পর্ষ্কাতর ব্যক্তিবর্গর বাড়িতে টেলিফোনে আড়ি পাতে ও আশেপাশে স্থায়ী বা ভ্রাম্যমান হাই ফ্রিকোয়েন্সী ট্রান্সমিটার সহ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহ করে।
জনমত ঘুরানোঃ “র” বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে সংশ্লিস্ট দেশের জনমত তার পছন্দ ও সুবিধা অনুযায়ি ঘুরাতে চেস্টা করে এজন্য RO নির্দেশনা অনুযায়ি ঐ দেশে অবশানকারি DFO এবং FO রা তাদের স্থানীয় নেটওয়ার্ক, লোকাল ইনফর্মার ও রিক্রুটদের ব্যবহার করে প্রকাশিত তথ্য ম্যানিপুলেট করার চেস্টা করে।
পর্যবেক্ষন,ম্যাসেজ ইন্টারসেপশন, সিগন্যাল ও পোস্টাল চ্যানেল ব্যাবহার,পর্যবেক্ষন,ফোন ট্যাপিং,ই মেইল হ্যাক,কোড উদ্ধারের মত আধুনিক গোয়েন্দা কৌশল ব্যাবহার করে তথ্যা সংগ্রহ করা হয়।একই তথ্য একাধিক উতস হলে সংগ্রহ করে ক্রস চেক করে দেখা হয়। এম্ন কি ব্ল্যাকবেরি কোম্পানীর পরিসেবা ও নেটওয়ার্ক “র” পর্যবেক্ষন ও নিয়ন্ত্রনের চেস্টা করে।
প্রধানঃ সঞ্জিব ত্রিপাঠি
গুরুত্বপুর্ন ব্যক্তিঃ এবি মাথুর এবং আনন্দ অর্ণি ।
এপর্যন্ত পরিচালিত গুরুত্বপুর্ন অপারেশনঃ
হিমালয়ে ELINT অপারেশন যা ১৯৬৪ সালে চীনের পারমানবিক পরীক্ষা চালানোর পর সি আই এ ও “র” ১৯৬৮ সালে যৌথভাবে চীনের মিসাইল স্টেষন ও ঐ বিস্ফোরনের স্থান নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিখ্যাত ভারপ্ত্যীয় পর্বতারোহী নন্দা দেবীর সহায়তায় পরিচালনা করে।
১৯৭০ এ কাশ্মীরী বিচ্ছিন্নতাবাদি দের ব্যবহার করে ভারতের বিমান ছিনতাই করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া যার ফলশ্রুতিতে ভারত তার আকাশসীমার উপর দিয়ে পাকিস্তানে দুই পাশের বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করে দিতে পারে।
১৯৭১ এ বাংলাদেশ অপারেশনঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয় অংশ গ্রহন।
অপারেশন স্মাইলিং বুদ্ধাঃ “র” এর দেয়া ১৯৭৪ সালে ভারতের পারমানবিক অস্ত্র প্রোগ্রাম এর কোড নেম।১৯৭৪ এর ১৮ মে পারমানবিক অস্ত্র তৈরী ও পরীক্ষার আগে পর্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা।
সিকিম দখলঃ ১৯৭৫ এ “র” এর সহোযোগীতায় ভারতীয় বাহিনী সিকিম একিভুত করে।
কাহুটা ব্লু প্রিন্ট ফাঁসঃ১৯৭৮ সালে পাকিস্তানের রাওয়াল পিন্ডিতে কাহুটা এলাকায় খান রিসার্চ ল্যাবটারিতে পাকিস্তানের পারমানবিক কর্মসুচির খবর উদ্ধার করে “র”। ল্যাবটারির কাছে তাদের পরিচালিত একটি নাপিতের দোকান থেকে সংগ্রহ করা চুলের স্যাম্পল এ বেডিয়েশন পরীক্ষা করে। এরপর তারা ক্ল্যান্ডেস্টাইন অপারেশন পরিচালনা করে প্রকল্প ধংস করতে চাইলে ভারতের ততকালীন প্রধান মন্ত্রী মোরাজি দেশাই তাদের নিবৃত্ত করেন এবং পাক প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক কে ফোন করে “র” এর পরিকল্পনার কথা জানিয়ে দেন।
জিয়াউর রহমান হত্যা ও জেনারেল এরশাদের ক্কখমতা দখলে সহায়তাঃ মোরাজি দেশাইয়ের চাপে আশির দশকের পুর্বে “র” জিয়া উতখাতে অপারেশন পরিচালনা করতে না পারলেও ১৯৮১ সালে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হত্যাকান্ড দিক নির্দেশনা দেয় এবং পরবর্তিতে জেনারেল এরশাদ কে ক্ষমতায় বস্তে সহায়তা করে।
অপারেশন মেঘদুতঃ ১৯৮২ তে ভারতের সেনা বাহিনীর যে ধরনের স্নো ওয়ার্ফেয়ারের গীয়ার ব্যবহার করে একই ধরনের আর্টিক ওয়ার্ফেয়ারের গীয়ার পাকিস্তান লন্ডনের একটি কোম্পানী থেকে সংগ্রহ করছে জানতে পারে “র”।যার ফলে ভারতীয় সেনা বাহিনী পাকিস্তানি দের পুর্বেই সিয়াচেল হিমবাহের সিংভাগ দখল করে নেয়।
মধ্য আশির দশক জুড়ে পাকিস্তানের অবস্থিত খালিস্তানি (শিখ) বিদ্রোহীদের ঘাটিতে ক্ল্যান্ডেস্টাইন অপারেশন পরিচালনা করে।
মালদ্বীপ অভিযানঃ ২০০ তামিল গেরিলার হাতে দখল হয়ে যাওয়া মালদ্বীপ কে সহায়তায় “র’ ও ভারতীয় বিমান বাহিনী একসাথে অভিযান পরিচালনা করে।
শ্রীলংকায় তামিল ট্রেনিংঃ আশির দশক ধরে “র” শ্রী লংকায় তামিলদের স্বাধীন রাস্ট্রের জন্য উদ্বুদ্ধকরন ট্রেনিং পরিচালনা সহ পরবর্তিতে ভারতীয় বাহিনীর অভিযানে সহায়তা করে।
অপারেশন চানক্যঃ পুরো ৯০ এর দশক ধরে কাশ্মীর উপত্যাকায় আই এস আই ও তাদের ট্রেনিং প্রাপ্ত গেরিলাদের ধরতে এ অভিযান চালানো হয়।
এছাড়া আফগান গৃহযুদ্ধে ৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে নর্দান অ্যালায়েন্স কে র” সহায়তা করে। মার্কিন যুক্ত রাস্ট্র পরিচালিত ওয়ার অন টেরর এ সক্রিয়ভাবে সি আই এ মোসাদ সহ অন্যান্য পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থার সাথে অংশগ্রহন।
২০১১ সালে পাকিস্তানের মেহেরান নৌ ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে তিনটি অত্যাধুনি আর্লি ওয়ার্নিং রাডারযুক্ত পাকিস্তানের একমাত্র আর্লি ওয়ার্নিং বিমান স্কোয়াড্রন ধংস করা।
পাকিস্তানের বালুচিস্তানে বিদ্রোহীদের প্রশিক্ষন ও অস্ত্র প্রদান।পাকিস্তানের করাচী ভিত্তিক রাজৈতিক হত্যাকান্ড পরিচালনা।নেপালের রাজা বিরেন্দ্র বীর বিক্রম কে নির্বংশ করা।৯০ এর দশকে নেয়া এক পরিকল্পনার অংশ হিসাবে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলিতে গত দেড় দশক ধরে ৫,০০০ ভারতীয় তরুনীদের বিয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্রী হিসাবে তৈরী করে প্রেরন করা হয়েছে।
ব্যার্থতাঃ
বাংলাদেশ কে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট এর হত্যাকান্ডে বাধা প্রদানে ব্যার্থতা অথবা ইচ্ছাকৃত নির্লিপ্ততা গ্রহন।
রাজীব গান্ধীর হত্যাকান্ড রুখতে ব্যার্থতা।
কার্গিল যুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মুভমেন্ট ধরতে ব্যার্থতা।
মুম্বাই হামলার আগাম তথ্য প্রদানে ব্যার্থতা।
আফগানিস্তানে আহামেদ শাহ মাসুদের হত্যা পরিকল্পনা সম্পর্কে তথ্যা সগ্রহে ব্যার্থতা।
২০০৭ সালে “র” মানিক চন্দ্র ছদ্যনাম ব্যবহারকারী বাংলাদেশের ডিজি এফ আই এর একজন গুপ্তচরের
অস্ত্বীত্তের কথা জানতে সক্ষম হয়। ঐ লোক ১৯৯৯ থেকে দীর্ঘ দিন পুর্ব দিল্লিতে অবস্থান করে গুতুত্বপুর্ন তথ্য সংগ্রহ করতো।
বড় ধরনের ডিফেকশনঃ ২০০৪ সালে “র” এর একজন জয়েন্ট সেক্রেটারি পদমর্যাদার কর্মকর্তা ও দক্ষিন পুর্ব এশিয়া ডেস্কের প্রধান রাবিন্দার সিং দলত্যাগ করে অনেক গুরুত্বপুর্ন ডকুমেন্ট সহ মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে আশ্রয় নেয়।
বাংলাদেশে এ “র” এর অপারেশন ও কার্যক্রমঃ
বাংলাদেশে কমপক্ষে ৩ লক্ষ ‘র” কর্মী ও ইনফর্মার সক্রিয় আছে বলে জানা এর মধ্যে ভারতীয় ৪,০০০ এর মত (স্পেকুলেশন) আর বাকিরা ইনফর্মার ,ধর্মীয় ও মতাদর্শগতভাবে ‘র” এর প্রতি চরম সহানুভুতিশীল যাদের যেকোন কাজে লাগানো সম্ভব। (কারেকশন ১০.০৯)
বাংলাদেশে যে সব বড় ঘটনার সাথে রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইং এর সংশ্লিস্টতা নিয়ে আঙ্গুল তোলা হয়ঃ
বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি বাহিনী গঠন ও পরিচালনায় “র” জরিত আছে বলে ধারনা করা হয়।
১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান হত্যা পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে র” এর সংশ্লিস্টতা ছিলো বলে ধরা হয়।
এরশাদের ক্ষমতায় আরোহন এ সহযোগীতা ও তাকে ডবল এজেন্ট সন্দেহে এরশাদের পতনে সহায়তা।
১৯৯৬ এর জেনারেল নাসিমের ব্যার্থ অভ্যুত্থান প্রচেস্টা।
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এম এস কিবরিয়া হত্যাকান্ড।
১/১১।
বিডিয়ার বিদ্রোহ।
এছাড়া বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিরতা তৈরীর জন্য রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইং কে দায়ি করা হয়।
বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল,এন জিও,সরকারী প্রতিস্টান,বানিজ্য অ্যাসোসিয়েশন থেকে শুরু করে প্রতিটি সরকারী বেসরকারি গুরুত্বপুর্ন প্রতিস্টানের মধ্যে রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইং এর কর্মীরা সক্রিয় আছেন। বাঙ্গালদেশের তাদের প্রধানতম রিক্রুটিং মাধ্যম হচ্ছে “ইন্ডিয়ান কালচারাল সেন্টার”। ঢাকা শহরের অন্তত দুইটি মসজিদ এর ইমাম অথবা সহকারি হিসাবে “র”
কর্মকর্তা কাজ করছেন। চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, গোপালগঞ্জ ও সিলেটের একাধিক মাদ্রাসার শিক্ষক কভারে “র” অফিসার কর্মরত আছেন।বাংলাদেশের প্রতিটা গ্যারিসন শহরের প্রবেশ মুখে এবং আশেপাশে একাধিক “র” সার্ভেইলেন্স পোস্ট এ “র” অফিসাররা কর্মরত আছেন।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি (আমার জানা মতে) যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখামুখি হওয়া জামাতের একজন নেতা(এখনো চার্জ গঠন করা হয় নি) “র” এর পুরানো সক্রিয় কর্মী।
পরেও পর্বঃ আই এস আই বা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (পাকিস্তান)
তথ্যসুত্রঃ
১।ইন্ডিয়াস এক্সটার্নাল ইনটেলিজেন্স ,সিক্রেটস অফ ড়িসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইং
-মেজর জেনারেল(অব ভি কে সিং )
২।দি কাওবয়েজ অব ‘র”- বি.রমন
৩।“এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্যঃ স্বাধীনতার প্রথম দশক”
-মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী বীর বিক্রম
৪।ইন সাইড “র” – অশোক রায়না।
৫।জিয়া হত্যা ও কিচু কথা-লেখকের নাম মনে নাই
৬।”র” এর ভায়াবহ থাবা”-সালাউদ্দিন শোয়েব চৌধুরি ।
৭।ইন্টার্নেট ও নিজেস্ব সুত্র।
.........................................-------------------------------------------------------------.............................
বাংলাদেশে এ যে ৫ টি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা সর্বাধিক সক্রিয় আছে বলে বিবেচনা করা হয় তার মধ্যে পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স সংক্ষেপে আই এস আই কে তর্ক সাপেক্ষে সবচেয়ে সক্রিয় গোয়েন্দা সংস্থা ধর আহয়ে থাকে। এই সংস্থা বাংলাদেশের অনেক ইতিহাস বিখ্যাত কুখ্যাত ব্যক্তি ও ঘটনঅঘটনের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত।
পুর্ব কথাঃ
“সরকারের ভিতরে সরকার” পাকিস্তানের মাটিতে এই নামে বহুল পরিচিত ও সবচেয়ে ক্ষমতাধর সংস্থাটির নাম আই এস আই। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা পরবর্তি পাকিস্তানে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তৈরী হয়েছিলো দুইটি গোয়েন্দা সংস্থা আইবি ও এমআই। কিন্তু ১৯৪৭ সালে পাক ভারত সংঘর্ষের পর সামরিক বাহিনীর প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্যগুলির মধ্যে সমন্নয় সাধনে ঘাটতি থাকায় এ জন্য একটি নতুন সংস্থা গঠন জরুরি হয়ে পড়লে। ১৯৪৮ এর মাঝামাঝি ঐ সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত অস্ট্রেলিয় বংশভুত ব্রিটিশ আর্মি অফিসার ও পাকিস্তান সেনা বাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্ট্যাফ মেজর জেনারেল রবার্ট চাওথামের পরামর্শে ও তত্বাবধানে আই এস আই তৈরী হয়। প্রাথামিক ভাবে এর কাজ তিন বাহিনীর প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাছাই করে সমন্নয় সাধন করা হলেও ১৯৫০ সাল থেকে একে আদালা করে শুধুমাত্র পাকিস্তান রাস্ট্রের নিরাপত্তা,স্বার্থ রক্ষা ও অখন্ডতা বজাইয় রাখার দায়িত্ব দেয়া হয়।প্রথম সংস্থা প্রধান কর্নেল সৈয়দ শহিদ হামিদ।
মুল মন্ত্রঃ বিশ্বাস একতা শৃংখলা।
লোগোঃ
সদর দফতরঃ ইসলামাবাদ সাহরা ই সোহরোয়ার্দি ।খুব অনারম্বর বাহ্যিক নিরাপত্তা বজায় রেখে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের সামনে দিয়ে প্রবেশ করতে হয়।
বর্তমান প্রধানঃ লেঃজেঃ আহামেদ সুজা পাশা।
সদস্য সংখ্যাঃ সম্ভাব্য ২৫,০০০ ও অসংখ্য ইনফর্মার।
লক্ষ ও উদ্দেশ্যঃ
পাকিস্তান রাস্ট্রিয় স্বার্থ ও অখন্ডতা রক্ষা করা।
যে সকল ব্যক্তি,গোস্টি,প্রতিস্টান,বৈদেশিক গোয়েন্দাসংস্থা রাস্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে তাদের উপর নজরদারি করা ও প্র্যোজনে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স পরিচালনা করা।
আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করতে সক্রিয় কার্যক্রম পরিচালনা।
বিদেশে গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করা।
ইসলাম ধর্ম সমুন্নত রাখা ও নিজেদের কার্য সিদ্ধির উদ্দেশ্যে ব্যাবহার করা।
ভারতের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধে কৌশলগত ভাবে নিজেদের অগ্রবর্তী রাখার উদ্দেশ্যে পার্শবর্তি সব দেশকে প্রভাবিত করা।
সরকার ও সেনা বাহিনীকে বাইরে ও ভিতর থেকে নিয়ন্ত্রন করা।
সরকারের বৈদেশিক নীতি নির্ধারন করা।
পাকিস্তানের সমাজে অবিশ্বাস ও অনৈক্য জিইয়ে রেখে নিজেদের সকল কর্মকান্ডর বৈধতা দেয়া।
ইসলামাবাদে আই এস আই রেসিডেন্স
সাধারন দায়িত্বঃ
নিজেদের অফিসারের,মিডিয়া কার্যকলাপ পর্যবেক্ষন করা।
পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গোস্টির উদ্দেশ্য ও গতিবিধি নজর রাখা।
দেশে ও দেশের বাইরে কুটনীতিকদের ওপর নরদারী করা।
বিভিন্ন কমিউনিকেশন ইন্টারসেপ্ট ও মিটরিং করা।
প্রাপ্ত তথয উপাত্ত পর্যালোচনা করা।
সঙ্গঠনঃ ৩ জন ডেপুটি ডাইরেক্টর জেনারেল এর অধীনে ৩ টি কোর বিষয়ের জন্য ৭টি বিভাগ কাজ করে।
ডিডিজি ইন্টার্নাল,ডিডিজি এক্সটার্নাল ও ডিডিজি জেনারেল।
এরমধ্যে ইন্টার্নাল উইং এর ডিডিজি -পলেটিক্যাল ইস্যু ও কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স,
এক্সটার্নাল উইং এর ডিডিজি -বৈদেশিক ইস্যু ও বিশ্লেষন।
ফরেন রিলেশন উইং এর ডিডিজি – পাকিস্তানের বাইরে বৈদেশিক যোগাযোগ রক্ষা ও দেখাশোনা করে।
ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স এর সব কাজ মুলত ৭ টি ডাইরেক্টরেটে দ্বারা পরিচালিত হয়।
১.জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স এক্স (JIX)
এর কাজ মুলত সেক্রেট্রিয়েট হিসাবে দায়িত্ব পালন করা।এই ডাইরেক্টরেট আই এস আই এর অন্যান্য উইং ,আঞ্চলিক সংগঠন ও মাঠ পর্যায়ে অবস্থিত ফিল্ড অফিসগুলির সাথে সমন্নয় সাধন করে এবং এদের প্রাশনিক সাপোর্ট প্রদান করে।এছাড়া প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনার ভিত্তিতে সম্ভাব্য হুমকি বিশ্লেষন করে করনীয় নির্ধারন করে।
২.জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (JIB)
এরা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সবচেয়ে বড় আর ক্ষমতাধর ঈশ্বর।এরা আই এস আই এর অন্যতম অপারেশনাল বাহু । এরাই আই এস আই পলিটিক্যাল উইং নামে সু/কুপরিচিত।তাদের অন্যতম কাজ পাকিস্তানের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক গতিবিধি পর্যবেক্ষন করা এবং সেই সাথে পার্শবর্তি দেশেসমুহের রাজনৈতিক ঘটনা নজরদারিতে রাখা এবং প্রয়োজনবোধে সেই সব দেশের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে হস্তক্ষেপ করা। এদের ৩ টি সাব সেকশন একটি ভারত সংক্রান্ত,একটি এন্টি টেরোরিজম এন্ড ভিআইপি প্রটেকশন,একটি অন্যান্য অপারেশন।
৩.জয়েন্ট কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (JCIB)
বৈদেশিক গোয়েন্দা ততপরতা পরিচালনাকরা এদের দায়িত্ব। মধ্য এশিয়া,দক্ষিন এশিয়া, আফগানিস্তান,মধ্যপ্রাচ্য,ইসরায়েল ও রাশিয়ায় তথ্য সংগ্রহ করা।এছাড়া বিদেশে অবস্থানকারী পাকিস্তানী কুটনীতিক ও অন্যদেশের কুটনীতিকদের নজরদারী করাও এই বিভাগের কাজ।কিছুদিন আগে ওয়াশিংটনে পাকিস্তানী রাস্ট্রদুতের মেমোগেট কেলেংকারী এরা স্পট করে।
৪.জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স নর্থ (JIN)
।জুম্মু কাশ্মীরে আই এস আই এর যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করা এই বিভাগের দায়িত্বে।এরা কাশ্মীরিদের মোটিভেশন প্রদান,ট্রেনিং ক্যাম্প পরিচালনা, প্ল্যান তৈরিতে সহায়তা,গোলাবারুদ সরব্রাহ ছাড়াও কাশ্মীর উপত্যাকায় ভারতি সেনা বাহিনীর সকল মুভমেন্ট এর উপর নজর রাখে।
৫.জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স মিসেলিনিয়াস (JIM)
বিশ্বের বিভিন্ন অংশে ক্ল্যান্ডেস্টাইন কভার্ট অপারেশন চালানো ও যুদ্ধকালীন গোয়েন্দাবৃত্তি পরিচালনা এই বিভাগের কাজ। এই বিভাগ মুলত পারমানবিক প্রযুক্তি,মেসাইল প্রযুক্তি,সমৃদ্ধ প্লুটোনিয়াম সংগ্রহ করার কাজে নিয়োজিত।৮০ ও ৯০ এর দশক জুড়ে রাশিয়া চেক প্রজাতন্ত্র,পোল্যান্ড,উত্তর কোরিয়া সহ বিভিন দেশে ব্যাপক ক্ল্যান্ডেস্টাইন অপারেশন পরিচালনা করে পাকিস্তানি গুপ্তচরেরা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন তথ্য সংগ্রহ করে আনে।তারা এমন কি উত্তর কোরিয়া থেকে পারমানবিক প্রযুক্তির বদলে জাহাজ ভর্তি উত্তর কোরিয়ান ক্ষেপনাস্ত্র সংগ্রহ করে আনে।
৬.জয়েন্ট সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (JSIB)
পাকিস্তানের সকল ওয়ার্লেস স্টেশনের ডেপুটি ডিরেক্টর এদের লোক। এরা ওয়ার্লেস ম্যাসেজ ইন্টার্সেপ্ট মনিটরিং,ফোনে আড়িপাতা,ছবি তোলা, চেইন সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স কালেকশন স্টেষন পরিচালনা, মাঠ কর্মীদের কমিউনিকেশন সাপোর্ট দেয়ার দায়িত্ব পালন করে। এছাড়া পার্শবর্তি দেশগুলির সকল কমিউনিকেশন চ্যানেল মিনিটরিং ও ইন্টার্সেপ্ট করে তথ্য সংগ্রহ করে। এরা ভারত পাকিস্তান সীমান্তে বরাবর ও কাশ্মীরে একগুচ্ছা কমিউনিকেশন ট্রাকিং স্টেশন পরিচালনা করে।
ইসলামাবাদ,করাচী,পেশোয়ার, লাহোর, কোয়েটায় এদের অফিস রয়েছে।
৭.জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স টেকনিক্যাল ডিভিশন (JIT)
যরদুর জানা যায় এরা বিস্ফোরক ও কেমিকেল ওয়ার্ফেয়ার নিয়ে কাজ করে।
এই ৭ টি ছাড়াও জয়েন্ট ডিভিশন অফ টেলনিক্যাল ইন্টেলিজেন্স নামে একটি শাখা আই এস আই পরিচালনা করে যারা মুলত বিভিন্ন ট্রেনিং এর সাথে জড়িত।
ট্রেনিং ও রিক্রুটমেন্টঃ আই এস আই এর কর্মীরা সাধারনত সেনা বাহিনীর এস এস জি,নৌ বাহিনীর ও বিমান বাহিনী থেকে আসে।।তবে নিচু স্তরের কর্মীদের অনেক সমইয় প্যারা মিলিটারি ও পুলিশ বাহিনী থেকেও নেয়া হয়। সিভিলিয়ানদের মধ্যে থেকে নেয়ার ক্ষেত্রে ফেডারেল রিপাব্লিক সারভিস কমিশন এর অধীনে বিজ্ঞাপন দেয়া হয় এবং এরা মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্সের কর্মচারী হিসাবে বিবেচিত হয়। পরীক্ষা শেষে বাছাইকৃত দের তালিকা আই এস আই;র কাছে চেক করার জন্য দেয়া হয় ও ব্যাকগ্রাউন্ড চেকিং শেষে মৌখিক ইন্টর্ভিউর মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়া শেষ হয়।
ট্রেনিংঃ
রিক্রুট হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পড় নির্বাচিত ব্যাক্তিকে প্রয়োজন ভেদে সল্পমেয়াদি ও দীর্ঘ মেয়াদি ট্রেনিং প্রদান করা হয়। সল্প মেয়াদে ১৫ দিনের ট্রেনিং এ প্রধানত রিক্রুটের মনবল বৃদ্ধির ব্যাবস্থা করা হয় পাশাপাশি,দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ,ইসলামিক অনুপ্রেরনা,সাধারন কিছু বিষয় যেমন ক্ল্যাসিফায়েড ইনফর্মেশন কি,ছোটখাটো প্রযুক্তির ব্যাবহার,নজরদারির সাধারন কৌশল, বহির্দুনিয়া আর গোয়েন্দা জগতের পার্থক্য ব্যাখ্যা,প্রতিপক্ষের গোয়েন্দা চেনার উপায়,গোয়েন্দা জগতে শ্ত্রু বা বন্ধু নেই সবাই প্রতিদন্দ্বি,সাধারন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যাবহার যেমন রেডিও ট্রান্সমিটার ব্যাবহার ইত্যাদি শেখানো হয়।
এরপর আই এস আই ট্রেনিং স্কুলে তাদের ১ বছরের ট্রেনিং এ এডমিন্সট্রেটিভ, বিদেশে ক্ল্যান্ডেস্টাইন অপারেশন ট্রেনিং,পালানোর ও গ্রেফতার এড়ানোর কৌশল,ছদ্দবেশ নেয়ার কৌশল,কাভার তৈরী করার উপায়,খালি হাতে আত্মরক্ষা,যোগাযোগ তৈরি,নেটোয়ার্ক তৈরি সহ প্রয়োজনিয় বিষয় শিক্ষা দেয়া হয়।
বিদেশের মাটিতে টার্গেট নির্বাচন ও কার্যক্রম পরিচালনা পদ্ধতিঃ
ধর্মীয় উন্মাদনা ব্যবহার।
মতাদর্শগত দুর্বলতা ব্যবহার।
স্থানীয় সংঠিত অপরাধী চক্রকে নিজের নেটওয়ার্কে একিভুতকরন ।যেমন মুম্বাইয়ে ডি কোম্পানী।
সাধারনত বেসিক কিছু বিষয়ের যেমন সরকার দ্বারা নির্যাতিত ব্যাক্তি বা গোস্টিকে ব্যবহার।
নারী সঙ্গ ও অর্থ লোভী ব্যক্তি।
ধর্মীয় দান দাক্ষিন্য করে এমন সঙ্গঠন ব্যবহার।
আক্রমনাত্তক গোয়েন্দাবৃত্তি যেমন পালটা হামলা,বোমা বিস্ফোরন,মানসিক যুদ্ধ,সামাজিক অস্থিরতা তৈরী,অন্তর্ঘাত পরিচালনা করা।
আই এস আই কে কখনো রীতিমত ব্যবসায়িক ব্রান্ড নেমের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে
পাকিস্তানী মডেল ভিনা মালিকের নগ্ন ছবিতে আই এস আই ট্যাটু ব্যাবহার
এপর্যন্ত পরিচালিত গুরুত্বপুর্ন অপারেশনঃ
১৯৬০ এর দশকে সি আই এ ও কানাডা সরকারের সাথে সম্মিলিত ভাবে স্বাধীন খালিস্তান আন্দোলনের জন্য গ্রাউন্ডওয়ার্ক করা এবং পরিকল্পনা প্রনয়ন।
৭০এর দশকের শেষে পাকিস্তানে লিবিয়ান সামরিক এ্যাটাশে কর্নেল হুসেই ইমাম মোবারক জেলে বন্দী ভুট্টোর অনুগত দুইজন নির্বাসিত পাকিস্তানী সাথে জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান পরিকল্পনা করার সময় আই এস আই এদের সপট করতে সক্ষম হয় এবং দুই পাকিস্তানীকে গ্রেফতার করে।
১৯৭৯ সালের ২৬শে জুন পাকিস্তানের ফরাসী রাস্ট্রদুত ও ফার্স্ট সেক্রেটারী গোপনে কাহুটা পারমানবিক প্রকল্পের ছবি তোলার চেস্টা করলে আই এস আই’র হাতে ধরা পরে এবং পরে জানা যায় যে পাকিস্তানের পারমাবিক প্রকল্পের অগ্রগতির তথ্য সংগ্রহের জন্য ঐ দুইজন সি আই এ’র রিক্রুটেড ছিলো।
আশির দশকে ইসলামাবাদে সোভিয়েত ইউনিয়নের এ্যাম্বেসীতে আই এস আই একজন ইনফর্মার ঢুকাতে সক্ষম হয় এবং তার কাছে জানতে পারে দুতাবাসের থার্ড সেক্রেটারী কারাকোরাম হাওইওয়ের উপর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য জনৈক ঈজাজকে ব্যাবহার করছে।পরে সেই লোক কে স্পট করে তার মাধ্যে সোভিয়েত দুতাবাসকে আই এস আই দীর্ঘ দিন ভুতা তথ্য সরবরাহ করে।
আশির দশক জুড়ে আই এস আই সাফল্যের আথে আফগানিস্তানে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে আফগান মুজাহেদিনদের অস্ত্র সরবরাহ ট্রেনিং প্রদান করে। এসময় তারা কয়েক হাজার স্ট্রিঙ্গার সারফেস টু এয়ার মিসাইল কেজিবি রেড আর্মির চোখ এড়িয়ে আফগানিস্তানে সাপ্লাই করে।
কিন্তু বেশিরভাগ অস্ত্র ছিলো সোভিয়েত ইউনিয় এ তৈরী যা আই এস আই মোসাদের কাছে থেকে সংগ্রহ আফগানদের দেয় যাতে আমেরিকার বিরুদ্ধে সরাসরি অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ রাশিয়ানরা না করতে পারে। এই পুরো ঘটনার উপর টম হ্যাংক্স অভিনিত “চার্লি উইলসন্স ওয়ার” নামের একটা হলিউড মুভি আছে।
আশির দশকে ইসলামাবাদে ইন্ডীয়ান দুতাবাদের স্কুলের এক শিক্ষিকার বেশে “র” এর অফিসার পাকিস্তানী পারমানবিক প্রকল্পে কাজ করা এক ইঞ্জিয়ারের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতো।দুইজনকেই আই এস আই স্পট করতে সক্ষম হয়।
ইলাম দীন নামে একজন “র” গুপ্তচর কে আই এস আই ধরতে সক্ষম হয় ।তার সাহায্যে পুরো একটা “র” স্পাই রিং আই এস আই এর হাতে ধরা পড়ে এবং পরে ভারত কে পাকিস্তানের সমরস্ত্র সম্পর্কে ভুয়া তথ্য সরব্রাহে তাদেরকে বাধ্য করা হয়।
আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ইন্দীরা গান্ধী সোভিয়েতদের গোপন পারমানবিক সাবমেরিন ঘাঁটি তৈরীর চুক্তি করার চেস্টা করলে আই এস আই তা ধরে ফেলে এবং সি আই এর কাছে ফাঁস করে দেয়।
১৯৭৯ সালে ইরানে মার্কিন দুতাবাসে জিম্মী উদ্ধারে অভিযানের জন্য সি আই এ’র লোকজন মার্কিন দুতাবাসে চাকরি রত এক পাকিস্তানী কুকের কাছে থেকে তথ্য সংগ্রহ করে।
১৯৮২ সালে আই এস আই মোসাদ ও সি আই এর যৌথ দল প্যালেস্টাইন ও লেবাননের জন্য পাঠানো সোভিয়েত অস্ত্রের চালান ভুমধ্য সাগরে স্পট করে এবং ধরে ফেলে।পরে সেই অস্ত্র আফগানিস্তানে পাচার করে দেয়।
১৯৯৩ এ মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জ ব্লাস্টের সাথে জড়িত থাকা ও দাউদ ইব্রাহিমের ডি কোম্পানীকে সাংপাঙ্গ সহ করাচীর সেফ হাউজে দীর্ঘ দিন নিরাপদের রাখা।
আফগান যুদ্ধে সোভিয়েতদের পরাজয়ের পর শুন্যতা ব্যাবহার করে আফগানিস্তানে নিয়ন্ত্রন প্রতিস্টা এবং ১৯৯৪ এ আফগান গৃগ যুদ্ধে পাকিস্তানের মুখপাত্র হিসাবে তালেবান দের তৈরী।
১৯৯৩ সালে বসনিয়ার যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর জন্য প্রচুর অস্ত্র সরবরাহ।
তালেবানদের প্রথমসারির ১৫ জন নেতার মধ্যে ৭ জনই আই এস আই কর্মী।
এছাড়া ভারতের মাটিতে বহু জঙ্গী হামলা পরিচালনা ও ভারতীয় জঙ্গীদের নিরাপদ অভয়ারন্য হিসাবে পাকিস্তানে আশ্রয় প্রদান।
২০১১ তে পাকিস্তানে এক সাংবাদিক কে হত্যা।
ব্যার্থতাঃ
১৯৬৫ সালের পাক ভারত যুদ্ধে কাশ্মীরে অপারেশন জিব্রাল্টারে সাফল্য ধরে রাখার জন্য স্থানীয় জনগনের সমর্থন যোগার করতে সম্পুর্ন ব্যার্থ হয়।
১৯৭০ এ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর প্রত্যাশা অনুযায়ি পাকিস্তানের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এর বিরুদ্ধে অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে মোটামুটি অবস্থানে নিয়ে যেতে ব্যার্থ হয়।
১৯৮১ সালে লিবিয়ানরা মিশর আর শাদ এর সাথে যুদ্ধের জন্য অবসরে যাওয়া পাকিস্তানী সৈনিকদের একটা বিশ্ল দললে মার্সেনারি হিসাবে ভাড়া করে যুদ্ধে পাঠিয়ে দেয় যা আই এস আই অনেক পরে জানতে পারে ততদিনে বিরাট সংখ্যক পাকিস্তানী সামরিক অফিসাররা চাক্রি ছেড়ে বেশি টাকার লোভে লিবিয়াতে ভাড়াটে সৈনিক হিসাবে পাড়ি জমিয়েছে।
১৯৮৪ সিয়াচেন হিমবাহ দখলের জন্য ব্রিটিশ কোম্পানীর কাছে থেকে স্নো ওয়ার্ফেয়র গিয়ার কেনার খবর গোপন রাখতে ব্যার্থ হয় আই এস আই। যার ফলে ভারতীয় সেনা বাহিনী ও “র” অপারেশন মেঘদুত সাফল্যের সাথে পরিচালনা করে সিয়াচেন হিমবাহে পাকিস্তানের আগেই অ্যাডভান্টেজ পজিশনে চলে যেতে সক্ষম হয়।
মোল্লা ওমরকে বুঝিয়ে ওসামা বিন লাদেন কে আমেরিকার হাতে তুলে দিতে ব্যার্থ হয়।
বেনজির ভুট্টো হত্যাকান্ড রোখতে ব্যার্থ।
করাচীতে মার্কিন কুটনীতিক কে অনুসরন করতে গিয়ে তার গুলিতে এক মেজর সহ দুই আই এস আই কর্মী মৃত্যু।
অন্যতম সেরা এজেন্টঃ
৯০ এর দশক জুড়ে আই এস আই পশ্চিম ও পুর্ব ইউরোপ ও দক্ষিন পুর্বএসশিয়ায় মিসাইল টেলনোলজি ও উন্নত পারমানবিক প্রযুক্তির সন্ধানে ব্যাপক অনুসন্ধান ও পাচারের নেটওয়ার্ক তৈরি করে। এসব ক্ষেত্রে সাফল্যের পাশাপাশি আই এস আই’র গুপ্তচরেরা অনেক অপরাধমুলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পরে।মেজর জেনারেল সুলতান হাবিব নামের এক আই এস আই কর্মী মস্কোতে পাকিস্তান দুতাবাসে ডিফেন্স এ্যাটাশে হিসাবে কাজ করার সময় সেন্ট্রাল এশিয়ান রিপাব্লিক এর দেশসমুহ,পোল্যান্ড,চেকোশ্লোভাকিয়াতে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত পারমানবিক প্রযুক্তি ও বিশুদ্ধ প্লুটোনিয়াম চুরি ও সংগ্রহের জন্য একাধিক ভাবে ধারাবাহিক ক্ল্যান্ডেস্টাইন অপারেশন পরিচালনা করে।মস্কো অপারেশন শেষে এরপর তিনি উত্তর কোরিয়ায় রাস্ট্রদুত হিসাবে যোগ দিয়ে সেখানে পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার যৌথ পারমানবিক ও মিসাইল অপারেশনের তত্বাবধান করেন। সেসময় উত্তর করিয়া থেকে জাহাজে বোঝাই করে দূর পাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র পাকিস্তানে চোরাচালানে নেতৃত্ব দেন।
ডিফেকশন এবং ডায়মন্ড আস্ত্র ও ড্রাগ ব্যাবসাঃ
সে সময় পাকিস্তানের এক্সপারটদের ক্ষেপনাস্ত্র ট্রেনিং এর জন্য উত্তর কোরিয়ায় পাঠানো হয় আর উত্তর কোরিয় টেকনিশিয়ানরা পারমানবিক অস্ত্র তৈরীর জন্য পাকিস্তানে ট্রেনিং নিতে আসে। এই অপারেশন এর ধারাবাহিকরা ধরে রাখতে উত্তর কোরীয়ায় পাকিস্তন দুতাবাসের থার্ড সেক্রেটারি হিসাবে ক্যাপ্টনে (অব) শাফাকাত চীমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। সেই সুযোগে ক্যাপ্টেন চিমা পরমানু অস্ত্র ও মিসাইল তৈরীর প্রযুক্তি অর্থের বিনিময়ে ইরানি ও ইরাকি ইন্টেলিজেন্স এজেন্সীর কাছে সরবরাহ করে। শুধু তাই নয় রাশিয়া ও সি এস আর দেশগুলি থেকে প্রচুর ইরেনিয়াম ও খুচ্রা যন্ত্রাংশ পাকিস্তানী এজেন্টরা সংগ্রহ করে ইরানি কাছে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়। পরে ক্যাপ্টেন চিমার অধীনের গ্রুপ্টাকে দেশে ফেরার নির্দেশ দিলে ক্যাপ্টেন চিমা পালিয়ে চিনের জিনজিয়াং এ চলে আসে।পরে পাকিস্তানের অনুরোধে চীনারা তাকে গ্রেফতার করে ইসলামাবাদ পাঠিয়ে দেয়।এর পরে তার আর তার বিক্রি করা টাকার কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি।তদন্তে বের হয়ে আসে ক্যাপ্টেন চিমা পিপিপি’র সর্বোচ্চ পর্যায়ের সুপারিশে উত্তর কোরীয়ায় পোস্টিং পেয়েছিলেন।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কাজ করার সময় সেখানে থাকে আই এস আই এজেন্টরা আইভরি কোস্ট,সিয়েরোলিয়ন ও কঙ্গোতে অবৈধ হীরা ও অস্ত্র ব্যবসায় জড়িয়ে পরে।
বাংলাদেশে আই এস আইঃ
“ভারত পুর্ব পাকিস্তান নিয়ে যাচ্ছে নিয়ে যাক,৫ বছরের মধ্যে আমরা সোনার বাংলা আমাদের কাছে ফিরিয়ে আনব,সোনার বাংলা শুধু আমাদের আর কারো নয়”
– জুলফিকার আলী ভুট্টো।
বাংলাদেশে আই এস আই একটি বেশ বহুল চর্চিত নাম।কাভার্ট ও নন কাভার্ট গুপ্তচর হিসাবে বাংলাদেশে ৪৫০ কভার্ট আই এস আই অপারেটর নিয়োজিত আছে। বেতনভুক্ত ইনফর্মার,সংখ্যালঘু বিহারী ও আদর্শগত ভাবে অত্যন্ত সহানুভুতিশীলদের ধরলে এই সংখ্যা ১ লক্ষর অধিক হবে।কিছু ইসলামিক দাতব্য প্রতিস্টান ও অর্থনৈতিক সংস্থা সাধারনত এদের উর্বর চারনক্ষেত্র।এছাড়া বেশকিছু ন্যাশানাল ও মাল্টি ন্যাশানাল কোম্পানীতে বড় পদে আই এস আই কর্মকর্তারা কাভার্ট অপারেটর হিসাবে আছে।বলা হয়ে থাকে ধানমন্ডি সিটি কলেজের কাছে একটি বহুতল টাওয়ারে অনেক আই এস আই’র
বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে আই এস আই এর অনেক সাফল্য ব্যার্থতা জড়িয়ে আছে
দুস্টলোকেরা বলে বাংলাদেশের একজন সাবেক রাস্ট্রপতি ১৯৭১ সালে আই এস আই’র ডীপ কাভার অপারেটর ছিলেন।যদিও তার সার্ভিস রেকর্ড বলে তিনি মাত্র ৫ বছর আই এস আই তে ছিলেন এবং ১৯৬৩ তে সংস্থা থেকে চলে যান। আর একজন রাস্ট্রপতি ডবল এজেন্ট হিসাবে দীর্ঘদিন থাকার পর আই এস আই তাকে সাময়িক ভাবে ত্যাগ করে।
বলা হয়ে থাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হত্যাকান্ড সি আই এ ও আই এস আই এর যৌথ প্রকল্প। নিজ ডিপ কাভার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে যুদ্ধ শেষ হওয়ার আড়াই মাস আগে ফারুক ও একমাস আগে খন্দকার রশিদ মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেয়। যেখানে ৭১ এ বাঙ্গালী অফিসারদের হয় গৃহবন্দী নয়তো জেলে রাখা হতো সেখানে রশিদ ঐ সময় পাকিস্তানের পোস্টিং থেকে ছুটি নিয়ে স্ত্রী সহ প্রথমে দেশে প্রবেশ করে পরে আগরতলা যায় এবং পরে জিয়াউর রহমানের জেড ফোর্সের সাথে ডিসেম্বরে বাংলাদেশের প্রবেশ করে। ফারুক আগস্ট মাস পর্যন্ত দুবাইয়ে ট্রেনিং এ থাকলেও শেষ সময়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।
১৯৭৬ এ বাংলাদেশ এর নাম ইসলামিক রিপাব্লিক অব ইস্ট পাকিস্তান রাখার পরিকল্পনা করলেও মাওলানা ভাসানীর দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
জেনারেল হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ কে পুরানো সম্পর্কের জের ধরে “র” এর কব্জা থেকে নিজেদের কব্জায় নিয়ে আসা।
বাংলাদেশ কে ব্যবহার করে উত্তরপুর্ব ভারতের স্বাধীনতাকামী গেরিলা গ্রুপগুলিকে অস্ত্র সরব্রাহ।
পশ্চিম সীমান্ত নজরদারিতে থাকায় বাংলাদেশের সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে নিজেস্ব নেটওয়ার্ক এর সাথে যোগাযোগ রক্ষা ও ভারতের জন্য সন্ত্রাসের প্যাকেজ রফতানী করা।
২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সম্পৃক্ততা
১৯৯৬ এ নেদারল্যান্ড প্লপ্ট,১৯৯৭ এ নেপালি আত্মঘাতী বোমারু আই এস আই কর্মী শ্রীবাস্তব এর সাহায্যে ,১৯৯৯ ১০ মিলিয়ন ডলারে এল টিটি ই আত্মঘাতী ভাড়া করা সহ আই এস আই অনেক বার বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে হত্যার একাধিক চেস্টা করে।
বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে আই এস আই’র কর্মীরা সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের দরবেশ উপাধি পাওয়া এক নেতা বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সাথে আই এস আই’র প্রধান কন্ট্যাক্ট।দুস্ট লোক বলে বি এন পি জামাতের শেষ সময়ে এসে আই এস আই যখন নিশ্চিত হয় শেখা হাসিনা আগামিতে বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসছেন তখন তারা দরবেশ এর মারফত আওয়ামী লীগ কে ৩০০ কোটি টাকা নির্বাচনি তহবিল প্রদান করে।যা “র” খুব ভালো ভাবে নেয় নি। ফলাফল তত্বাবধায়ক আমলে আওয়ামী লীগে RATS এর উত্থান ও শেখ হাসিনাকে কোন্ঠাসা করার চেস্টা।
বাংলাদেশ এ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এক ভাই আই এস আই’র অন্যতম প্রধান কন্ট্যাক্ট।
আর জামাতের কথা বলে নাহয় সময় নস্ট নাই করি ক্বেন… কারন সিনিয়ার নেতাদের মধ্যে কম বেশি সবাই পাকিস্তানের প্রতি শুধু সহানুভুতিশীলই না… তাদের সাথে যেকোন পর্যায়ে সহযোগিতা করতে ও সহযোগিতা নিতে প্রস্তুত থাকে।
আরো সংযুক্তিঃ
১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে হরতাল কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে জাসদের মিছিল চলাকালে শিবিরের সশস্ত্র হামলায় সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে জাসদ নেতা মুকিম মারাত্মক আহত হন এবং মারা যান। ঐ হামলায় প্লট আই এস আই’র করা ছিলো।
চট্টগ্রামে এইট মার্ডার ।চট্টগ্রামের বদ্দরহাটে শিবির ক্যাডাররা মাইক্রোবাসের মধ্যে থাকা ৮ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে প্রকাশ্য দিবালোকে ব্রাশফায়ার করে নৃশংসভাবে হত্যা করে।নাসির গ্রুপের নাসির সহ প্রত্যেকে আই এস আই ট্রেনিং ক্যাপমের সদস্য ছিলো।
৫ মে, ২০০৭ চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি আর্মি ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থাপনা ভিডিও করার সময় আর্মি সদস্যরা শিবিরের ২ নেতাকে ভিডিও ফুটেজসহ আটক করে।
চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা থেকে শিবির ক্যাডার মাহমুদুল চৌধুরীকে পুলিশ সদস্যরা একে-৪৭ এর ৩৩টি বুলেটসহ গ্রেপ্তার করে। যার মধ্যে ১৭টি বুলেট দেশীয় কোনো কারখানায় তৈরি হয়েছে বলে সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল মত প্রকাশ করে।
১৯৯৯ রাবি ছাত্র শিবির সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর পাকিস্তানে তৈরী রিভলবার, গুলি ও গান পাউডার সহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়।তার কোয়েটায় টেনিং নেয়ার অভিজ্ঞতা আছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি নামে একটি দল আছে যাদের ১২,০০০ কর্মী সোভিয়েত বিরোধী যুদ্ধ ও পরবর্তিতে আফগান গৃহযুদ্ধে লড়াঈ করে ।এদের ট্রেনিং রিক্রুটমেন্ট আসা যাওয়ার সব খরচ আই এস আই বহন করে।
১৯৯২ সাল থেকে রোহিঙ্গা রিফিউজিদের মধ্য থেকে বাছাই করে তাদের ট্রেনিং দিয়ে কাজে লাগায় আই এস আই।
চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র যে জেটিতে ভিড়ল এই জেটিটা শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় ছিল। শিল্পমন্ত্রীর অনুমতি ছাড়া বা জানা ছাড়া অস্ত্র চট্টগ্রামের জেটিতে ভিড়তে পারেনা। আর তখন শিল্পমন্ত্রী ছিলেন জামায়াতে ইসলামের মতিউর রহমান নিজামী।
১২৫ টা গুপ্ত জঙ্গী সংঠন আই এস আই’র হাতে তৈরী যাদের অনেকের বাংলাদেশে শাখা আছে।
মধ্যযুগের একজন বিখ্যাত আরব মনীষির নামে তৈরি করা একটি দাতব্য সংগঠন ও চিকিৎসা কেন্দ্রের নামে আসা ফান্ড এর বড় একটা অংশ স্থানীয় কর্মী আর ইনফর্মারদের বেতন ভাতায় খরচ হয়।
অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে টার্গেট করে আক্রমনের নির্দেশ দেন বাংলাদেশের বড় ইসলামিক আলেমের ছদ্দবেশে একজন আই এস আই’র কর্মী।
মৃত্যুতেও তুমি জয়ী হুগো চাভেজ
মৃত্যুতে যিনি যত ভালোবাসা পান, জীবনে তিনি ততটাই বড়। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজের মৃত্যুর শোক তাই মত-মতাদর্শ আর দেশজাতি ছাপিয়ে বিশ্বজনীনতা পেয়েছে। মনের ভেতরে উঠে দাঁড়িয়ে অনেকে আজ বলছে, ‘সালাম কমরেড, বিদায় বন্ধু।’ আমার কোনো স্কুলশিক্ষক বন্ধু তৃতীয় শ্রেণীর ক্লাসে শিশুদের অবাক করে দিয়ে কেঁদে ফেলবেন। থমথমে মুখে বলবেন দূর কোনো মহাদেশের এক নেতার কথা। তারা অবাক হয়ে শুনবে। অনেকেই ভুলে যাবে। কিন্তু তাদের কারও কারও মনে চাভেজ নামটি অক্ষয় দাগ ফেলবে। তারাও হতে চাইবে দেশের সেবক, জনতার নায়ক। চাভেজের মৃত্যু নয়, তাই জীবনটাই সত্য। সেই জীবনের সত্যিকার আরম্ভ এই মৃত্যুর পর। ক্যালেন্ডারের ছোট সময়ে তিনি ক্যানসারের কাছে পরাজিত হলেন ৫ মার্চ। আর ইতিহাসের বড়কালে কবে তাঁর মৃত্যু হবে, জানা নেই। মৃত্যুর পর যাঁর শিক্ষা যত টেকে, তিনি ততটাই সার্থক। এ জন্যই চাভেজের মৃত্যুতে শোকও আছে, আশাবাদও আছে। আর আছে ভালোবাসা। চাভেজের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছেন, ‘মন ছোট করবেন না, সহিংসতায় জড়াবেন না। কোনো ঘৃণা নয়। আমাদের হূদয়ে আসুক একটি মাত্র আবেগ—ভালোবাসা। ভালোবাসা, শান্তি ও শৃঙ্খলা।’ এই বক্তৃতায় তিনি সাবেক শাসক আর তাঁদের বিদেশি বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের অশান্তির পাঁয়তারার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি করেন।
চাভেজের উত্থান এক ‘ঘাড়ভাঙা ঘোড়ার উঠে দাঁড়ানোর’ গল্প। যেন এক রূপকথা। যেন এক সফল কর্নেল তাহের। জাঁদরেল অফিসাররা চ্যাংড়া সেনা অফিসার চাভেজের চরিত্রগুণে আঁতকে উঠে পাঠিয়ে দেন প্রত্যন্ত এলাকায়। অসুবিধাকে সুবিধা বানিয়ে ফেলার ওস্তাদি এই তরুণের জানা ছিল। পাহাড়ি এলাকার নির্বাসনে আদিবাসীদের ঘনিষ্ঠ হলেন। ক্ষমতায় এসে তার প্রতিদানও দিলেন। সেই পাহাড়ি প্রাদেশিক প্রান্ত থেকেই সরাসরি আঘাত করেন কেন্দ্রে। ১৯৯২ সালে সেনা-অভ্যুত্থান ঘটান—যদিও ব্যর্থ হন। পরাজয়টাকেও তিনি ছোট জয় বলে দেখালেন। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে দাঁড়িয়ে বললেন: ‘সহযোদ্ধাগণ, দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, এবারের জন্য, আমরা রাজধানীতে লক্ষ্য হাসিল করতে পারলাম না।’ বার্তাটা পরিষ্কার: এবারের জন্য রাজধানী হাতছাড়া হলো বটে, পরেরবার আর ছাড়ান নাই।
দুই বছর জেলবাসের পর রাস্তা বদলে ফেললেন। দলকে জনগণের কাছে নিয়ে গেলেন। জনগণের অসন্তোষকে চে গুয়েভারার মতো বিদ্রোহী পথে না নিয়ে নিলেন গণজাগরণের পথে। ফলাফল নির্বাচনে বিপুল বিজয়। সিমন দ্য বলিভার তাঁর নায়ক, তাঁর গুরু চিলির নিহত নেতা সালভাদর আলেন্দে, কাস্ত্রো তাঁর প্রেরণা। এই তিন পদার্থে গড়া তাঁর বলিভারীয় জাতীয় সমাজতন্ত্র। এ ব্যাপারেও তিনি সৃষ্টিশীল। চাভেজের ভাষায়, ‘আলেন্দের মতোই আমরা শান্তিবাদী গণতন্ত্রী। তবে তাঁর মতো নিরস্ত্র নই।’ এই প্রেসিডেন্ট বারবার প্রয়োজনমতো অস্ত্র ও পথ বদলেছেন। প্রথমে ধরলেন বন্দুক, পরের দফায় ধরলেন কলম আর মাইক্রোফোন। ক্ষমতায় এলেন ভোটের মাধ্যমে, কিন্তু উৎখাত হলেন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সামরিক অভ্যুত্থানে। মজার ব্যাপার হলো, ওয়াশিংটনে যখন চাভেজের ‘পতনে’ উল্লাস চলছে, তখনই গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আবার তিনি ফিরে এলেন প্রেসিডেন্ট ভবনের বারান্দায়। উল্লসিত জনতার অভিবাদন গ্রহণ করে বললেন, ‘হয় সমাজতন্ত্র, নয় মৃত্যু’। ঘাড়ভাঙা ঘোড়া সত্যিই উঠে দাঁড়াল। ক্যুয়ের ঘটনা তাঁকে বদলে দিল। তাঁর শৃঙ্খলা হয়ে উঠল ইস্পাতকঠিন, ধৈর্য দুর্ভেদ্য আর রাজনীতি আরও পরিষ্কার।
লিখতেন, পড়তেন আর বেশিটাই বলতেন। সপ্তাহে অন্তত ৪০ ঘণ্টা বক্তৃতা দিতেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকের চেয়ে বেশি সময় দিতেন বস্তিতে, গ্রামাঞ্চলে আর জনসভায়। এ এক সত্যিকার তৃণমূল গণতন্ত্র। বিপ্লবী পার্টির চেয়ে জনতাকে বিপ্লবী করে তোলাই ছিল তাঁর প্রধান কর্মসূচি। খাদ্য, বাসস্থান আর কাজের সঙ্গে সঙ্গে জনগণের মধ্যে ছড়াতেন বিপ্লবী আত্মবিশ্বাস। যেমন রেডিও-টিভিতে প্রতি সপ্তাহে সরাসরি জনগণের সঙ্গে আলোচনায় বসতেন। বিষয় ছিল, বস্তির স্বাস্থ্যসেবা বা গৃহায়ণ কীভাবে চলবে ইত্যাদি। যে কেউ ফোন করে প্রশ্ন বা মতামত দিতে পারে। এভাবেই তৈরি হতো তাঁর নীতি ও কর্মসূচি। দলীয় ও প্রশাসনিক আমলাদের ডিঙিয়ে তিনি স্থানীয় সরকারকে ক্ষমতা দিলেন। ফলাফল হলো জাদুকরি: মাত্র তিন বছরে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে নামল। বেকারত্ব ২০ থেকে ৭ শতাংশে কমল। শাসনামলের ১৩ বছরে ভেনেজুয়েলা থেকে নিরক্ষরতা বিদায় নিল। বাজেটের ৪৩ শতাংশেরও বেশি ব্যয় হয় সামাজিক কর্মসূচিতে। ১০ বছরে নির্মিত হয়েছে ২২টিরও বেশি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষকের সংখ্যা ৬৫ হাজার থেকে হয়েছে সাড়ে তিন লাখ। চলছে শতবর্ষ ধরে আটকে রাখা কৃষি সংস্কার কার্যক্রম। হাতে নিয়েছেন ২০ লাখ পরিবারের জন্য আবাসন কর্মসূচি।
সমৃদ্ধ তেলসম্পদের জনমুখী ব্যবহার মানুষের জীবন ও চিন্তা দুটোকেই বদলে দিতে শুরু করল। রাজনীতির কেন্দ্রীয় শক্তি হয়ে উঠল গরিব জনসাধারণ। সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের এই মডেল বিশ্বে অভূতপূর্ব। লেনিনের বিপ্লবী স্পর্ধার সঙ্গে আলেন্দের জনবন্ধুতা মিলে গেল। চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের আদর্শে পার্টিকেন্দ্র ও ক্ষমতাকেন্দ্রকে জনতার জবাবদিহির মুখে রাখা হলো। এটাই হলো তৃণমূল গণতন্ত্র। এলিট আর সম্পত্তিবানদের কাগুজে গণতন্ত্র নয়। বিপ্লবী গণতন্ত্র নির্বাচনকে ভয় পায় না, বরং তাকে শ্রেণী-সংগ্রামের দারুণ হাতিয়ার বানাতে পারে। এরই নাম চাভেজমো বা চাভেজ পন্থা।
ভেনেজুয়েলার পথ ধরে বলিভিয়া, ইকুয়েডর, নিকারাগুয়া ও চিলিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাতীয়তাবাদী বাম সরকার। হন্ডুরাস ও প্যারাগুয়েতে নির্বাচিত বাম সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের মদদে সামরিক ষড়যন্ত্রে হটানো হলেও, তাদের ফিরে আসা সময়ের ব্যাপার হয়তো। এদের বলা হয় চাভেজমো। অন্যদিকে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, পেরু ও চিলির মধ্য বাম সরকারগুলোকে ব্রাজিলের সাবেক জনপ্রিয় বাম প্রেসিডেন্ট লুলার নামে লুলিজমো ডাকা হয়। এরা সবাই মিলে মার্কোসুর নামে আঞ্চলিক ঐক্য আর ইউনিসুর নামে অর্থনৈতিক জোট গঠন করে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের খপ্পর থেকে বেরিয়ে আসছে। গঠন করেছেন চতুর্দেশীয় জোট অ্যালবা। ক্যারিবীয় দেশগুলো এবং মেক্সিকোও এর সদস্য হতে যাচ্ছে। ভিয়েতনাম হতে যাচ্ছে পর্যবেক্ষক সদস্য। সোজা কথায়, সত্তর-আশির দশকে যে লাতিন আমেরিকাই মার্কিন সামরিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্যে পিষ্ট হয়েছে, সেই লাতিন আমেরিকার অবসান হচ্ছে। শতবর্ষের নিঃসঙ্গতা ঘুচিয়ে জাগছে সেখানকার ইতিহাস। একে ধরে রাখার সাংগঠনিক কাঠামো তৈরিই এখনকার কাজ।
পশ্চিমা শাসকদের অভিযোগ, চাভেজ ব্যক্তিতন্ত্র তৈরি করেছেন, প্রেসিডেন্টের নির্বাচনের সীমা উঠিয়ে দিয়েছেন এবং ক্ষমতা স্বহস্তে কুক্ষিগত করেছেন। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীও পর পর তিনবারের বেশি নির্বাচিত হতে পারেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পারেন শতবার। এ ক্ষেত্রে কি স্বৈরতন্ত্র হচ্ছে না? মৃত্যুর সংবাদে নিউইয়র্ক টাইমস শিরোনাম করেছে, চাভেজ বিভক্ত দেশ রেখে যাচ্ছেন। মিথ্যা নয় কথাটা, চাভেজের আগে ৫ ভাগ ধনী বনাম ৯৫ ভাগ গরিবের বিভক্তি ছিল। ছক এখন উল্টে গেছে। ৫ ভাগের দাপটের জায়গায় বসেছে ৯৫ ভাগের ক্ষমতায়ন। চাভেজ এমনই এক ‘স্বৈরশাসক’, যিনি ১৫টি নিরপেক্ষ নির্বাচন জিতেছেন। তিনি এমনই এক সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা, যা গণতন্ত্রকে জনমানুষের হাতিয়ার করেছে। তিনি এমনই এক পার্টির নেতা, যে পার্টির কর্মসূচি ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার তৃণমূলের প্রতিনিধিদের হাতে। তিনি কোনো উত্তরাধিকার বসিয়ে যাননি। নির্বাচন হওয়ার কথা আগামী ৩০ দিনের মধ্যে। চাভেজ কেবল ভাইস প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে গেছেন।
চাভেজ দোষ-গুণের মানুষই ছিলেন, দেবতা বা দানব নন। যে মানুষ জনগণের সুপ্ত শক্তিকে জাগিয়ে তোলেন, ইতিহাসের গতি বুঝে ইতিহাস নির্মাণ করেন, নিজের ভেতরে ধারণ করেন দেশের আত্মাকে, তাঁকে স্বাভাবিক পথে হাঁটলে চলে না। বিশ্বনন্দিত কথাসাহিত্যিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ বলেছিলেন, চাভেজ এক জোরদার কংক্রিট, যিনি তাঁর দেশকে বাঁচাতে পারেন। শত্রুর কাছে তিনি বুনো ষাঁড়। জনগণের সামনে তিনি নাচেন, গান গান, বেসবল খেলেন, গল্প বলেন বক্তৃতার মধ্যে। যিনি যিশুর উদ্দেশে বলেন, ‘আমাকে এখন নিয়ো না প্রভু, এখনো অনেক কাজ বাকি।’ অনেক কাজ সত্যিই বাকি। চাভেজমো যেন চে গুয়েভারার মতো ভক্তিতে শেষ না হয়, তা যেন টিকে থাকে মুক্তির তাকদ নিয়ে।
বৃদ্ধ বয়সে তিনি হতে চেয়েছিলেন বাচ্চাদের শিক্ষক, গাইতে চেয়েছিলেন ‘কোপলা’ নামের পল্লিগীতি। লাতিন আমেরিকার নিষ্পেষিত মানুষের বুকচেরা ফরিয়াদ থেকে জন্মেছিলেন চাভেজ। ফিরে গেলেন তাঁর আপন মানুষের মনের মর্মে। আসুন, তাঁকে বিদায়ের সালাম জানাই। তাঁকে বলি, মানুষ যা পারে, ততটুকু তুমি করেছ, তোমাকে ধন্যবাদ কমরেড। জীবনের কোনো লড়াইয়ে যিনি হারেননি, ৫৮ বছর বয়সে রহস্যময় ক্যানসারের কাছে তিনি হেরে গেলেন। দুঃখটা এখানেই।
ফারুক ওয়াসিফ: সাংবাদিক ও লেখক।
[email protected]
সূত্র : প্রথম আলো, ০৭-০৩-২০১৩
মৃত্যুতে যিনি যত ভালোবাসা পান, জীবনে তিনি ততটাই বড়। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজের মৃত্যুর শোক তাই মত-মতাদর্শ আর দেশজাতি ছাপিয়ে বিশ্বজনীনতা পেয়েছে। মনের ভেতরে উঠে দাঁড়িয়ে অনেকে আজ বলছে, ‘সালাম কমরেড, বিদায় বন্ধু।’ আমার কোনো স্কুলশিক্ষক বন্ধু তৃতীয় শ্রেণীর ক্লাসে শিশুদের অবাক করে দিয়ে কেঁদে ফেলবেন। থমথমে মুখে বলবেন দূর কোনো মহাদেশের এক নেতার কথা। তারা অবাক হয়ে শুনবে। অনেকেই ভুলে যাবে। কিন্তু তাদের কারও কারও মনে চাভেজ নামটি অক্ষয় দাগ ফেলবে। তারাও হতে চাইবে দেশের সেবক, জনতার নায়ক। চাভেজের মৃত্যু নয়, তাই জীবনটাই সত্য। সেই জীবনের সত্যিকার আরম্ভ এই মৃত্যুর পর। ক্যালেন্ডারের ছোট সময়ে তিনি ক্যানসারের কাছে পরাজিত হলেন ৫ মার্চ। আর ইতিহাসের বড়কালে কবে তাঁর মৃত্যু হবে, জানা নেই। মৃত্যুর পর যাঁর শিক্ষা যত টেকে, তিনি ততটাই সার্থক। এ জন্যই চাভেজের মৃত্যুতে শোকও আছে, আশাবাদও আছে। আর আছে ভালোবাসা। চাভেজের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছেন, ‘মন ছোট করবেন না, সহিংসতায় জড়াবেন না। কোনো ঘৃণা নয়। আমাদের হূদয়ে আসুক একটি মাত্র আবেগ—ভালোবাসা। ভালোবাসা, শান্তি ও শৃঙ্খলা।’ এই বক্তৃতায় তিনি সাবেক শাসক আর তাঁদের বিদেশি বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের অশান্তির পাঁয়তারার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি করেন।
চাভেজের উত্থান এক ‘ঘাড়ভাঙা ঘোড়ার উঠে দাঁড়ানোর’ গল্প। যেন এক রূপকথা। যেন এক সফল কর্নেল তাহের। জাঁদরেল অফিসাররা চ্যাংড়া সেনা অফিসার চাভেজের চরিত্রগুণে আঁতকে উঠে পাঠিয়ে দেন প্রত্যন্ত এলাকায়। অসুবিধাকে সুবিধা বানিয়ে ফেলার ওস্তাদি এই তরুণের জানা ছিল। পাহাড়ি এলাকার নির্বাসনে আদিবাসীদের ঘনিষ্ঠ হলেন। ক্ষমতায় এসে তার প্রতিদানও দিলেন। সেই পাহাড়ি প্রাদেশিক প্রান্ত থেকেই সরাসরি আঘাত করেন কেন্দ্রে। ১৯৯২ সালে সেনা-অভ্যুত্থান ঘটান—যদিও ব্যর্থ হন। পরাজয়টাকেও তিনি ছোট জয় বলে দেখালেন। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে দাঁড়িয়ে বললেন: ‘সহযোদ্ধাগণ, দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, এবারের জন্য, আমরা রাজধানীতে লক্ষ্য হাসিল করতে পারলাম না।’ বার্তাটা পরিষ্কার: এবারের জন্য রাজধানী হাতছাড়া হলো বটে, পরেরবার আর ছাড়ান নাই।
দুই বছর জেলবাসের পর রাস্তা বদলে ফেললেন। দলকে জনগণের কাছে নিয়ে গেলেন। জনগণের অসন্তোষকে চে গুয়েভারার মতো বিদ্রোহী পথে না নিয়ে নিলেন গণজাগরণের পথে। ফলাফল নির্বাচনে বিপুল বিজয়। সিমন দ্য বলিভার তাঁর নায়ক, তাঁর গুরু চিলির নিহত নেতা সালভাদর আলেন্দে, কাস্ত্রো তাঁর প্রেরণা। এই তিন পদার্থে গড়া তাঁর বলিভারীয় জাতীয় সমাজতন্ত্র। এ ব্যাপারেও তিনি সৃষ্টিশীল। চাভেজের ভাষায়, ‘আলেন্দের মতোই আমরা শান্তিবাদী গণতন্ত্রী। তবে তাঁর মতো নিরস্ত্র নই।’ এই প্রেসিডেন্ট বারবার প্রয়োজনমতো অস্ত্র ও পথ বদলেছেন। প্রথমে ধরলেন বন্দুক, পরের দফায় ধরলেন কলম আর মাইক্রোফোন। ক্ষমতায় এলেন ভোটের মাধ্যমে, কিন্তু উৎখাত হলেন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সামরিক অভ্যুত্থানে। মজার ব্যাপার হলো, ওয়াশিংটনে যখন চাভেজের ‘পতনে’ উল্লাস চলছে, তখনই গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আবার তিনি ফিরে এলেন প্রেসিডেন্ট ভবনের বারান্দায়। উল্লসিত জনতার অভিবাদন গ্রহণ করে বললেন, ‘হয় সমাজতন্ত্র, নয় মৃত্যু’। ঘাড়ভাঙা ঘোড়া সত্যিই উঠে দাঁড়াল। ক্যুয়ের ঘটনা তাঁকে বদলে দিল। তাঁর শৃঙ্খলা হয়ে উঠল ইস্পাতকঠিন, ধৈর্য দুর্ভেদ্য আর রাজনীতি আরও পরিষ্কার।
লিখতেন, পড়তেন আর বেশিটাই বলতেন। সপ্তাহে অন্তত ৪০ ঘণ্টা বক্তৃতা দিতেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকের চেয়ে বেশি সময় দিতেন বস্তিতে, গ্রামাঞ্চলে আর জনসভায়। এ এক সত্যিকার তৃণমূল গণতন্ত্র। বিপ্লবী পার্টির চেয়ে জনতাকে বিপ্লবী করে তোলাই ছিল তাঁর প্রধান কর্মসূচি। খাদ্য, বাসস্থান আর কাজের সঙ্গে সঙ্গে জনগণের মধ্যে ছড়াতেন বিপ্লবী আত্মবিশ্বাস। যেমন রেডিও-টিভিতে প্রতি সপ্তাহে সরাসরি জনগণের সঙ্গে আলোচনায় বসতেন। বিষয় ছিল, বস্তির স্বাস্থ্যসেবা বা গৃহায়ণ কীভাবে চলবে ইত্যাদি। যে কেউ ফোন করে প্রশ্ন বা মতামত দিতে পারে। এভাবেই তৈরি হতো তাঁর নীতি ও কর্মসূচি। দলীয় ও প্রশাসনিক আমলাদের ডিঙিয়ে তিনি স্থানীয় সরকারকে ক্ষমতা দিলেন। ফলাফল হলো জাদুকরি: মাত্র তিন বছরে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে নামল। বেকারত্ব ২০ থেকে ৭ শতাংশে কমল। শাসনামলের ১৩ বছরে ভেনেজুয়েলা থেকে নিরক্ষরতা বিদায় নিল। বাজেটের ৪৩ শতাংশেরও বেশি ব্যয় হয় সামাজিক কর্মসূচিতে। ১০ বছরে নির্মিত হয়েছে ২২টিরও বেশি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষকের সংখ্যা ৬৫ হাজার থেকে হয়েছে সাড়ে তিন লাখ। চলছে শতবর্ষ ধরে আটকে রাখা কৃষি সংস্কার কার্যক্রম। হাতে নিয়েছেন ২০ লাখ পরিবারের জন্য আবাসন কর্মসূচি।
সমৃদ্ধ তেলসম্পদের জনমুখী ব্যবহার মানুষের জীবন ও চিন্তা দুটোকেই বদলে দিতে শুরু করল। রাজনীতির কেন্দ্রীয় শক্তি হয়ে উঠল গরিব জনসাধারণ। সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের এই মডেল বিশ্বে অভূতপূর্ব। লেনিনের বিপ্লবী স্পর্ধার সঙ্গে আলেন্দের জনবন্ধুতা মিলে গেল। চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের আদর্শে পার্টিকেন্দ্র ও ক্ষমতাকেন্দ্রকে জনতার জবাবদিহির মুখে রাখা হলো। এটাই হলো তৃণমূল গণতন্ত্র। এলিট আর সম্পত্তিবানদের কাগুজে গণতন্ত্র নয়। বিপ্লবী গণতন্ত্র নির্বাচনকে ভয় পায় না, বরং তাকে শ্রেণী-সংগ্রামের দারুণ হাতিয়ার বানাতে পারে। এরই নাম চাভেজমো বা চাভেজ পন্থা।
ভেনেজুয়েলার পথ ধরে বলিভিয়া, ইকুয়েডর, নিকারাগুয়া ও চিলিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাতীয়তাবাদী বাম সরকার। হন্ডুরাস ও প্যারাগুয়েতে নির্বাচিত বাম সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের মদদে সামরিক ষড়যন্ত্রে হটানো হলেও, তাদের ফিরে আসা সময়ের ব্যাপার হয়তো। এদের বলা হয় চাভেজমো। অন্যদিকে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, পেরু ও চিলির মধ্য বাম সরকারগুলোকে ব্রাজিলের সাবেক জনপ্রিয় বাম প্রেসিডেন্ট লুলার নামে লুলিজমো ডাকা হয়। এরা সবাই মিলে মার্কোসুর নামে আঞ্চলিক ঐক্য আর ইউনিসুর নামে অর্থনৈতিক জোট গঠন করে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের খপ্পর থেকে বেরিয়ে আসছে। গঠন করেছেন চতুর্দেশীয় জোট অ্যালবা। ক্যারিবীয় দেশগুলো এবং মেক্সিকোও এর সদস্য হতে যাচ্ছে। ভিয়েতনাম হতে যাচ্ছে পর্যবেক্ষক সদস্য। সোজা কথায়, সত্তর-আশির দশকে যে লাতিন আমেরিকাই মার্কিন সামরিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্যে পিষ্ট হয়েছে, সেই লাতিন আমেরিকার অবসান হচ্ছে। শতবর্ষের নিঃসঙ্গতা ঘুচিয়ে জাগছে সেখানকার ইতিহাস। একে ধরে রাখার সাংগঠনিক কাঠামো তৈরিই এখনকার কাজ।
পশ্চিমা শাসকদের অভিযোগ, চাভেজ ব্যক্তিতন্ত্র তৈরি করেছেন, প্রেসিডেন্টের নির্বাচনের সীমা উঠিয়ে দিয়েছেন এবং ক্ষমতা স্বহস্তে কুক্ষিগত করেছেন। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীও পর পর তিনবারের বেশি নির্বাচিত হতে পারেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পারেন শতবার। এ ক্ষেত্রে কি স্বৈরতন্ত্র হচ্ছে না? মৃত্যুর সংবাদে নিউইয়র্ক টাইমস শিরোনাম করেছে, চাভেজ বিভক্ত দেশ রেখে যাচ্ছেন। মিথ্যা নয় কথাটা, চাভেজের আগে ৫ ভাগ ধনী বনাম ৯৫ ভাগ গরিবের বিভক্তি ছিল। ছক এখন উল্টে গেছে। ৫ ভাগের দাপটের জায়গায় বসেছে ৯৫ ভাগের ক্ষমতায়ন। চাভেজ এমনই এক ‘স্বৈরশাসক’, যিনি ১৫টি নিরপেক্ষ নির্বাচন জিতেছেন। তিনি এমনই এক সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা, যা গণতন্ত্রকে জনমানুষের হাতিয়ার করেছে। তিনি এমনই এক পার্টির নেতা, যে পার্টির কর্মসূচি ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার তৃণমূলের প্রতিনিধিদের হাতে। তিনি কোনো উত্তরাধিকার বসিয়ে যাননি। নির্বাচন হওয়ার কথা আগামী ৩০ দিনের মধ্যে। চাভেজ কেবল ভাইস প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে গেছেন।
চাভেজ দোষ-গুণের মানুষই ছিলেন, দেবতা বা দানব নন। যে মানুষ জনগণের সুপ্ত শক্তিকে জাগিয়ে তোলেন, ইতিহাসের গতি বুঝে ইতিহাস নির্মাণ করেন, নিজের ভেতরে ধারণ করেন দেশের আত্মাকে, তাঁকে স্বাভাবিক পথে হাঁটলে চলে না। বিশ্বনন্দিত কথাসাহিত্যিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ বলেছিলেন, চাভেজ এক জোরদার কংক্রিট, যিনি তাঁর দেশকে বাঁচাতে পারেন। শত্রুর কাছে তিনি বুনো ষাঁড়। জনগণের সামনে তিনি নাচেন, গান গান, বেসবল খেলেন, গল্প বলেন বক্তৃতার মধ্যে। যিনি যিশুর উদ্দেশে বলেন, ‘আমাকে এখন নিয়ো না প্রভু, এখনো অনেক কাজ বাকি।’ অনেক কাজ সত্যিই বাকি। চাভেজমো যেন চে গুয়েভারার মতো ভক্তিতে শেষ না হয়, তা যেন টিকে থাকে মুক্তির তাকদ নিয়ে।
বৃদ্ধ বয়সে তিনি হতে চেয়েছিলেন বাচ্চাদের শিক্ষক, গাইতে চেয়েছিলেন ‘কোপলা’ নামের পল্লিগীতি। লাতিন আমেরিকার নিষ্পেষিত মানুষের বুকচেরা ফরিয়াদ থেকে জন্মেছিলেন চাভেজ। ফিরে গেলেন তাঁর আপন মানুষের মনের মর্মে। আসুন, তাঁকে বিদায়ের সালাম জানাই। তাঁকে বলি, মানুষ যা পারে, ততটুকু তুমি করেছ, তোমাকে ধন্যবাদ কমরেড। জীবনের কোনো লড়াইয়ে যিনি হারেননি, ৫৮ বছর বয়সে রহস্যময় ক্যানসারের কাছে তিনি হেরে গেলেন। দুঃখটা এখানেই।
ফারুক ওয়াসিফ: সাংবাদিক ও লেখক।
[email protected]
সূত্র : প্রথম আলো, ০৭-০৩-২০১৩